বাংলাদেশে এবার গোলা ছুড়ল মিয়ানমারের যুদ্ধবিমান- বিগত কিছু বছর যাবত এমন খবর অহরহ শুনি যে, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত অতিক্রম করেছে মিয়ানমার সামরীক বাহিনী, সীমান্তের অপর প্রান্ত থেকে গোলা ছুড়ছে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী এছাড়াও মিয়ানমার আমাদের আকাশসীমা লঙ্ঘনের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে নিয়মিত। তারা যেন বাংলাদেশের কাছে নিজেদেরকে পরাশক্তি হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছে বারবার।
১৯৬৬ সালে সীমান্ত নিষ্পত্তিকরণের সময় তৎকালীন পাকিস্তান ও বার্মা সরকার একটি চুক্তিতে উপনীত হয়। এই চুক্তির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সমসাময়িক সময়ের নাফ নদীর খাতের মধ্যস্থিত অংশকে দুই দেশের সীমান্ত রূপে নির্দিষ্ট করা হয়। মায়ানমারের অংশে নাফ নদীর বারোটি প্রশাখা আছে। চুক্তি অনুযায়ী যেহেতু নাফ নদীর খাতের মধ্যভাগকেই আন্তর্জাতিক সীমারেখা হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছিল তাই মিয়ানমার সেই প্রশাখাসমূহে এমন কোন পদক্ষেপ নিতে পারতো না, যা নাফ নদীর গতিপথে বড়সড় পরিবর্তন আনতে পারে। কিন্তু মিয়ানমার এই চুক্তি অগ্রাহ্য করে ২০০০ সাল নাগাদ বারোটির মধ্যে এগারোটি নদীতে বাঁধ নির্মাণ করে। এতে করে নাফ নদীর মূল প্রবাহ বাংলাদেশের দিকে সরে আসে এবং প্রায় ২৫০০ একর ভূখণ্ড বাংলাদেশের ভূসীমা থেকে হারিয়ে যায়।
২০০০ সালে মিয়ানমার সর্বশেষ প্রশাখাতেও বাঁধ দিতে উদ্যোগী হলে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক হয়। এই বাঁধ হয়ে গেলে নাফ নদীর বাংলাদেশ অংশে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হওয়ার আশংকা করা হচ্ছিলো, যাতে টেকনাফ শহরের অস্তিত্ব বিলীন হতে পারতো তাই বাংলাদেশ রাইফেলস ১৯৬৬ সালের চুক্তি মোতাবেক বাধ নির্মাণ না করতে অনুরোধ জানালে মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষাবাহিনী অশোভন ও অপেশাদারী ভাষায় চিঠি পাঠায়।
এতেই তৎকালীন বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমান বাংলাদশ রাইফেলস (বিজিবি) কে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে বলেন, এবং উনার বক্তব্যে জানা যায় যে, তিনি যুদ্ধ শুরুর আগের রাতে মর্টারের গোলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরণের পঁচিশ লাখ গোলাবারুদ কক্সবাজারে পাঠিয়ে দেন। এর মধ্যে অর্ধেক তিনি কক্সবাজারে মোতায়েন রাখার আদেশ দেন, আর বাকি গোলাবারুদ মূল রণাঙ্গনে পাঠিয়ে দেন।
দৈনিক সময়ের সংবাদ
মূল যুদ্ধ শুরু হয়েছিলো ২০০০ সালের ৮ই জানুয়ারি দুপুর আড়াইটায়। জেনারেল ফজলুর রহমান সেদিন নিয়মিত সীমান্ত পরিদর্শনের অংশ হিসেবে দিনাজপুরে অবস্থান করছিলেন। সেখান থেকেই তিনি বিসমিল্লাহ বলে একটি কোড ওয়ার্ডের মাধ্যমে অপারেশন শুরুর আদেশ দেন।
যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিলো টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নে তোতার দ্বীপ সংলগ্ন অঞ্চলে। এখানে নাফ নদীর একটি বাঁকের সামনে প্রথম গুলি শুরু করে বিডিআর। অতর্কিত হামলায় মিয়ানমারের প্রায় ছয় শতাধিক সৈন্য, ও বাঁধ নির্মাণের শ্রমিক নিহত হয়।
যুদ্ধে বার্মার সেনা সমাবেশ ও হতাহতের খবর গোয়েন্দা সূত্রে প্রাপ্ত। যুদ্ধের কিছু আগেই বেশ কিছু গোয়েন্দাকে বার্মায় পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিলো তথ্য সংগ্রহের জন্য। তাদের থেকে তথ্য পাওয়া যায় একজন মেজর জেনারেল ও একজন রিয়ার এডমিরালের অধীনে বার্মার নিয়মিত বাহিনীর ২৫০০০ সৈন্য যুদ্ধের জন্য উপস্থিত হয়েছিলো। সেই তুলনায় বাংলাদেশের সামরিক প্রস্তুতি ছিল খুবই কম মাত্র ২৫০০ সৈন্য।
আর বাংলাদেশর মাত্র ২৫০০ সৈন্যের মার খেয়ে বার্মার (মানকি বাহিনী) পিছু হটে এবং জেনারেল থান শোয়ে ৯ জানুয়ারি রেঙ্গুনে নিযুক্ত বিদেশী সাংবাদিক ও রাষ্ট্রদূতদের তলব করে ঘোষণা করেন যে-
আমরা চাই বাংলাদেশ ও আমরা কোনোরূপ পূর্বশর্ত ছাড়া একসাথে আলোচনায় বসে বিবাদমান বিষয়গুলোর নিষ্পত্তি করি।
এছাড়াও তিনি আক্রমণ বন্ধের অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশের কাছে মিয়ানমার একটি চিঠি পাঠান। এবং ক্ষমা চেয়ে যুদ্ধ বন্ধের জন্য আবেদন জানান।
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।