বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন বাংলার নারী জাগরণের স্বপ্নদ্রষ্টা। তার স্বপ্ন ছিল সমাজে নারী-পুরুষ সমান মর্যাদা আর অধিকার নিয়ে বাঁচবে। সারা জীবন তিনি তার সেই স্বপ্নের কথা বলে গেছেন, লিখে গেছেন তার গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধগুলোতে। যা আজও দিকনির্দেশনা হিসেবে সামনে রয়েছে। বেগম রোকেয়ার জীবন আচরণ ও নারী শিক্ষার প্রসারে তার কাজ স্মরণীয়। তিনি এই লড়াই চালিয়ে গেছেন আমৃত্যু।
আজ বুধবার (৯ ডিসেম্বর) সেই মহীয়সী নারীর জন্মদিন। দিনটি রোকেয়া দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি উপলক্ষে নানাআ নুষ্ঠানিকতায় স্মরণ করা হবে তাকে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রোকেয়া দিবস উদযাপন ও বেগম রোকেয়া পদক-২০২০ প্রদান করা হবে। এ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি পৃথক বাণী দিয়েছেন।
১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুরের পায়রাবন্দে এক জমিদার পরিবারে রোকেয়ার জন্ম। জীবনের নানা বাঁকে তিনি রোকেয়া খাতুন, রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, মিসেস আর এস হোসেন নামেও লিখতেন এবং পরিচিত ছিলেন। দিবসটি উপলক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় দেশব্যাপী জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সমাজসেবায় বিভিন্ন অবদানের জন্য এ বছর পাঁচ জন নারীকে বেগম রোকেয়া পদক ২০২০ দেওয়া হবে।
সকাল ১০টায় রাজধানীর বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে বেগম রোকেয়া পদক প্রদান করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল সাড়ে ১০টায় গণভবন থেকে অনলাইনে এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেবেন।
বেগম রোকেয়া পদক-২০২০-এর জন্য মনোনীত পাঁচ জন নারী ব্যক্তিত্ব হলেন, নারী শিক্ষায় প্রফেসর ড. শিরীন আখতার, পেশাগত উন্নয়নের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে কর্নেল (ডা.) নাজমা বেগম, নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে মঞ্জুলিকা চাকমা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির মাধ্যমে নারী জাগরণের ক্ষেত্রে বেগম মুশতারী শফি (বীর মুক্তিযোদ্ধা) এবং নারী অধিকারে অবদানের ক্ষেত্রে বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদা আক্তার এ বছর বেগম রোকেয়া পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন।
পদকপ্রাপ্তরা আজ (বুধবার) সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরার কাছ থেকে সম্মাননা পদক, সনদ ও চেক গ্রহণ করবেন।
এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক ‘বেগম রোকেয়া দিবস ২০২০’ উদযাপন ও ‘বেগম রোকেয়া পদক ২০২০’ প্রদানের উদ্যোগকে তিনি স্বাগত জানান।
মো. আবদুল হামিদ বলেন, ঊনবিংশ শতাব্দীর কুসংস্কারাচ্ছন্ন, পশ্চাদপদ ও রক্ষণশীল সমাজের শৃঙ্খল ভেঙে শিক্ষাবঞ্চিত, অবহেলিত ও প্রতিবন্ধকতার আবর্তে নিপতিত নারী সমাজকে শিক্ষার আলোয় উদ্ভাসিত করতে বেগম রোকেয়া গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তিনি ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক, নারী গবেষক, প্রগতিশীল চিন্তা ও উদার মানবতাবোধের অধিকারী। তিনি বলেন, নারীর ভাগ্যোন্নয়নে শিক্ষা ও স্বাবলম্বিতা যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তা তিনি দূরদর্শিতার সঙ্গে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। সমাজের বিরূপ ও বিরুদ্ধ চিন্তার প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে নারীশিক্ষা ও উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে তিনি সমাজ সংস্কারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, নারী-পুরুষের সমান অংশীদারিত্ব ব্যতীত টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার নারী সমাজকে দেশের সার্বিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্তকরণের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। সরকারের বিচক্ষণ, গতিশীল ও বলিষ্ঠ পদক্ষেপের কারণে রাজনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, আইন প্রণয়ন, প্রশাসন, অর্থনীতি, সাংবাদিকতা, শিল্প-সংস্কৃতি ও খেলাধুলাসহ পেশাভিত্তিক সকল ক্ষেত্রে নারীদের আজ গর্বিত পদচারণা। নারীরা এভারেস্ট বিজয় থেকে শুরু করে শান্তি মিশনের ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্বও সমদক্ষতায় সম্পাদন করছেন।
এ বছর নারী ও সমাজ উন্নয়নে অনন্য অবদান রাখার জন্য যারা ‘বেগম রোকেয়া পদক-২০২০ পেয়েছেন, রাষ্ট্রপতি তাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। বেগম রোকেয়ার কর্ম ও জীবনাদর্শ অনুসরণ করে আমাদের নারী সমাজ উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাবে, বেগম রোকেয়া দিবসে তিনি এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।