মহামারি করোনার বিস্তার ঠেকাতে এ বছর কোনো পরীক্ষা নেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বুধবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী এ কথা বলেন।
দেশে করোনার কারণে সরকার সবার আগে যে পদক্ষেপ নিয়েছিলো সেটি হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা। যার ফলে গত ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও এই ছুটি বাড়িয়ে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত করেছে সরকার। অবশ্য কিছু ক্ষেত্রে অনলাইন ও টেলিভিশনে ক্লাস নেয়া হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে এ বছরের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী, ইবতেদায়ি সমাপনী, জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি), জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) এবং উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষা বাতিল করা হয়। সবশেষ করোনা পরিস্থিতিতে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষাও হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, ‘মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত করতে এনসিটিবি নতুন করে একটি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়ন করেছে। তার আলোকে শিক্ষার্থীদের জন্য অ্যাসাইনমেন্ট করতে দেয়া হবে। এটি মূল্যায়নের মাধ্যমে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত করা হবে।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) প্রণয়ন করা সিলেবাস থেকে চারটি অ্যাসাইনমেন্ট এক মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে। এ সিলেবাসটি এনটিসিটির মাধ্যমে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের কাছে পাঠানো হবে। শিক্ষকদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে তা পৌঁছে দেয়া হবে। শিক্ষার্থীরা অনলাইনে বা খাতায় লিখে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে পারবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এর বাইরে শিক্ষার্থীদের কোনো ধরনের বাসার কাজ দেয়া যাবে না। চার সপ্তাহে শুধু চারটি অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করে শিক্ষকদের কাছে শিক্ষার্থীরা পৌঁছে দেবে।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘গত মার্চে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের পর টেলিভিশন ও অনলাইনে ক্লাস চালু করেছি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও অনলাইনে ক্লাস শুরু হয়েছে। সবাই এর উন্নতিতে কাজ করছে। তবে এটা ঠিক, সবার প্রয়োজনীয় ডিভাইস না থাকায় সমস্যা থাকছে। তবে শিক্ষকরা মোবাইলে খোঁজ-খবর নিচ্ছে। সবার কাছে নতুন বই আছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সহযোগিতার মনোভাব ও ক্লাসে আগ্রহ আছে। নভেম্বরের মধ্যে অনেকে সিলেবাস শেষ করতে পারবে। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী পাঠ্যবই পড়তে পারবে। তাদের মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা হবে।’
‘করোনার কারণে যেসব শিক্ষার্থীরা তাদের গ্রামের বাড়ি বা অন্য কোথাও চলে গেছেন তারা অনলাইনে অথবা তার নিকটতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে পারবেন। এছাড়াও এই সিলেবাস ও অ্যাসাইনমেন্ট অনলাইনেও পাওয়া যাবে’ বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে দীপু মনি বলেন, ‘এবার পরীক্ষা ছাড়াই নবম শ্রেণিতে উঠতে হবে। তবে সনদ অবশ্যই দেয়া হবে। তবে মূল্যায়ন কিভাবে করা হবে তা পরবর্তীতে জানিয়ে দেয়া হবে।’
‘শিক্ষাবর্ষ বাড়ানোর কোন পরিকল্পনা নেই’ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, যেসব শিক্ষার্থীরা দূর্বল বা এ বছর যারা একদমই ক্লাস করতে পারেনি তাদের কথা বিশেষভাবে ভাবা হচ্ছে। ছোট্ট কোনো কমিউনিটির মাধ্যমে তাদের পাঠদান পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।
এসএসসি পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, এসএসসি পরীক্ষার বিষয়ে এখনো কোনো ধরণের সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে শিক্ষার্থীদের বাড়িতে বই আছে। সময় নষ্ট না করে তাদের মনোযোগ দিয়ে বই পড়ার আহ্বান জানান তিনি।
‘পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিয়েই পরবর্তী সেমিস্টারে উঠতে হবে’ জানিয়ে দীপু মনি বলেন, ‘কারিগরি শিক্ষার্থীদের হাতে কলমে শিখতে হয়। এজন্য অবশ্যই তাদের পরীক্ষা নেয়া হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক গোলাম ফারুক চৌধুরী এবং শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।