সাত বছরের বেশি সময় ধরে কোমায় থাকা মরমী গীতিকবি হাসন রাজার প্রপৌত্র দেওয়ান মোহাম্মদ তাছাওয়ার রাজাকে কর্নেল হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল দেওয়ান মোহাম্মদ তাছাওয়ার রাজার চাকরির মেয়াদের শেষ দিন ১২ অক্টোবরে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তাকে কর্নেল র্যাংকে উন্নীত করা হয়। তার পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে হাসপাতালের কক্ষেই সম্পন্ন হয় পদোন্নতির আনুষ্ঠানিকতা।
২০১৩ সালের ১১ মার্চে সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল থেকে কর্নেল পদে পদোন্নতির মাসখানেক আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। হৃদরোগ থেকে হাইপোক্সিক ইস্কেমিক ব্রেইন ইনজুরি হলে কোমায় চলে যান। দেশে এবং দেশের বাইরে চিকিৎসার পর একই বছরের ১২ মে থেকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
এ অবস্থাতেই গত ১২ অক্টোবরের তার অবসরগ্রহণের দিন চলে আসে। তবে, দিনটি কেবলমাত্র অবসরগ্রহণের দিন হিসেবেই থাকেনি, হয়ে ওঠে এক অন্যরকম আনন্দময় দিন। এদিন এক অনবদ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে দীর্ঘ সাড়ে সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে কোমায় থাকা দেওয়ান মোহাম্মদ তাছাওয়ার রাজাকে ‘কর্নেল’ হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
সিএমএইচের ৩১৪ নাম্বার কেবিনের বিছানাতেই তার সেনাবাহিনীর পোশাকে পড়ানো হয় কর্নেল ব্যাজ।
তার স্ত্রী মোসলেহা মুনিরা রাজা বলেন, কর্নেল হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার মাত্র মাসখানেক আগে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন একটা মানসিক কষ্ট ছিলো বিষয়টা নিয়ে, কারণ সেনাবাহিনীতে সবাই বলতো তার মতো ডায়নামিক অফিসার একদিন জেনারেল হবে।
তিনি আরও বলেন, তবে তার সেনাবাহিনীর ক্যারিয়ারের শেষ দিনে যে সম্মানটা পেয়েছে তা অনন্য। আমি সবার কাছে কতটা কৃতজ্ঞ তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।
দেওয়ান মোহাম্মদ তাছাওয়ার রাজার জন্ম ১৯৬৭ সালের ১৫ অক্টোবর সিলেটের এক সম্ভ্রান্ত বংশে। তিনি মরমী গীতিকবি দেওয়ান হাসন রাজার প্রপৌত্র, খান বাহাদুর একলিমুর রাজা চৌধুরীর পৌত্র এবং দেওয়ান তালিবুর রাজা চৌধুরীর ছেলে।
১৯৯৬ সালে তিনি মোসলেহা মনিরা রাজাকে বিয়ে করেন এবং সংসার জীবনে তার দুই ছেলে এবং এক মেয়ে আছে।
সিলেট ব্লু বার্ড স্কুল এবং সিলেট ক্যাডেট থেকে পড়াশোনা শেষ করে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির ২০ নং লং কোর্স সমাপ্ত করে সেনাবাহিনীতে কমিশন্ড অফিসার হিসেবে যোগ দেন ১৯৮৯ সালের ২৩ জুন।
বর্ণাঢ্য সেনাজীবনে তিনি সেনাবাহিনীর ট্যাঙ্ক রেজিমেন্ট ১২ ল্যান্সারস এর কমান্ডার, আর্মার স্কুল এবং ইনফ্যান্ট্রি স্কুল এর প্রশিক্ষকসহ নানা দায়িত্ব পালন করেছেন। ইরাক-কুয়েত এবং সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও যোগ দিয়েছেন এবং দুইবার অর্জন করেছেন পিস মেডেল।
সেনাবাহিনী ছাড়াও তাছাওয়ার রাজা মনোনিবেশ করেছিলেন লেখালেখিতে। তার রচিত ও সম্পাদিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে হাসন রাজা সমগ্র, ও জেনারেল মাই জেনারেল, বাংলাদেশ আর্মাড কোর।
পারিবারিক গৌরবোজ্জ্বল অতীততে আরও সমুজ্জ্বল করতে তিনি প্রতিষ্ঠা ও পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন হাসন রাজা ফাউন্ডেশন, তালিবুর রাজা স্মৃতি পাঠাগার, শিক্ষাবিদ দেওয়ান তালিবুর রাজা ট্রাস্ট এবং মিউজিয়াম অব রাজাস।
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।