ভরা মৌসুমেও বৃষ্টি নেই চট্টগ্রামে। বলা যায় একেবারে রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া। এরই মধ্যে শুক্রবার (১২ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে জোয়ারের পানিতে দুই থেকে তিন ফুট নিচে ডুবে গেছে চট্টগ্রাম নগরীর ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, আগ্রাবাদ, বহদ্দারহাট, ষোলশহর, পতেঙ্গা, মোহরা ও বাকলিয়া এলাকা।
এসব এলাকা কর্ণফুলী নদী ও বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী। যা কোন রকম বৃষ্টিপাত ছাড়াই শীতকালেও অমাবস্যা-পূর্ণিমার প্রবল জোয়ারে ডুবে যায়। গত ১৫ বছর ধরে এই অবস্থা চলে আসছে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয় বলে জানান পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়া পূর্বাভাস কর্মকর্তা বিশ্বজিত চৌধুরী।
তিনি বলেন, সাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপ ও বায়ুচাপের পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকা ও নিম্নাঞ্চলে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২ থেকে ৪ ফুট উচ্চতার পানি উঠতে পারে। আর জোয়ারের পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় চট্টগ্রাম মহানগরীতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।
এদিকে সমস্যা নিরসনে গত ৬ বছর আগে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)। যার মেয়াদ গত বছরের জুন মাসেই শেষ হয়েছে। কিন্তু প্রকল্প শেষ না হওয়ায় এর কোন সুফল পাচ্ছে না চট্টগ্রামবাসী।
এ প্রসঙ্গে চউকের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান বিন সামছ বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও করোনার সংক্রমণের কারণে কাজ শেষ হয়নি। চলতি বছরের শেষের দিকে হয়তো কাজ শেষ হবে। প্রকল্পের আওতায় নগরীর সবকটি খালের মুখে ইতোমধ্যে স্লুইস গেইট নির্মাণ, খাল ও নালা-নর্দমা খনন শেষ হয়েছে। ফলে চট্টগ্রামের দুই তৃতীয়াংশ এলাকায় এখন কোন জলাবদ্ধতা নেই। জোয়ারের পানির কারণে নগরীর নিম্নাঞ্চলগুলো ডুবছে। ভাটার সময় আবার সেখানে পানি থাকে না।
তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে বৃষ্টি ও অমাবস্যার প্রভাবে গত বৃহস্পতিবার থেকে প্রবল জোয়ার হচ্ছে। এতে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই, ষোলশহর, পতেঙ্গা, আগ্রাবাদ, বহদ্দারহাট, মোহরা, বাকলিয়ার নিম্নাঞ্চল দিন ও রাতে দু‘বার ডুবছে। ফলে এসব এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দুর্ভোগ বেড়েছে।
নগরীর পাইকারি পণ্যের বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আহসান খালেদ বলেন, প্রতিবছর শীত আর বর্ষায় জোয়ারের সময় দিনে দু‘বার ডুবে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ। বর্ষাকালে এই প্রবণতা আরো বাড়ে। বৃষ্টি না হলেও গত বৃহস্পতিবার থেকে প্রবল জোয়ারে পানি উঠছে আর নামছে। সমস্যা নিরসনে চাক্তাই খালের মুখে স্লুইস গেইট বসালেও তা কোনো কাজে আসছে না। এতে এখানকার সহস্রাধিক ব্যবসায়ী প্রতিনিয়ত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
নগরীর পতেঙ্গা সল্টগোলা এলাকার বাসিন্দা মহিউদ্দিন বলেন, জোয়ারের পানিতে সল্টগোলার অর্ধেক এলাকা ডুবে গেছে। এসব এলাকার এমন কোন ভবন বা নিচু ঘরবাড়ি নেই যেখানে দুই থেকে চার ফুট পর্যন্ত জোয়ারের পানি জমেনি। ফলে এলাকার মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে।
বাকলিয়া কল্পলোক আবাসিক এলাকার বাসিন্দা জানান, জোয়ারের পানিতে আবাসিক এলাকার সবকটি সড়ক দুই থেকে তিন ফুট ডুবে রয়েছে। অনেকগুলো ভবনেও জোয়ারের পানি ঢুকে গেছে। ফলে আবাসিকের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।
একই কথা বলেছেন নগরীর চান্দাঁগাও থানার মোহরা এলাকার বাসিন্দা ও ওয়ালটন ডিলারের মালিক ছাফা মারোয়ান বলেন, মোহরা এলাকা কর্ণফুলী নদী তীরবর্তী এলাকা। প্রায় সময় জোয়ারের পানি এলাকার সড়কে সয়লাব থাকে। তবে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার প্রবল জোয়ার হওয়ায় সড়ক উপচে দোকানপাট ও বিভিন্ন ভবনে পানি প্রবেশ করেছে। এতে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে।