একের পর এক নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। এবার সেই তালিকায় যোগ হলো মসুরের ডাল। চালের বাজার তো অনেক আগে থেকেই ‘অস্থির’। ভরা মৌসুমেও চাল কিনতে আগের চেয়ে কেজিতে ২ থেকে ৪ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে। মসুর ডালের দামটাও মানভেদে বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত।
মালিবাগবাজারে গতকাল বাজার করতে এসে আক্ষেপের কথা জানাচ্ছিলেন দিনমজুর মো. আজগর আলী। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘মাঝে কিছু দিন ৪৬-৪৮ টাকায় মোটা চাল পাওয়া যেত। এখন তা ৫০ টাকায় ঠেকেছে। তার পরও পাঁচ কেজি নুরজাহানের গুটি স্বর্ণা কিনেছি। না কিনে তো আর উপায় নেই। তরিতরকারির কেজিও ৬০ টাকার ওপরে। এক পিস ডিমও এখন ১০ টাকা।’
রাজধানীর খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে নতুন আসা চালের দাম কেজিপ্রতি ২ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সেই সঙ্গে আগের কেনা চালের দামও অনেকে কেজিপ্রতি ১ থেকে ২ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। খুচরা পর্যায়ে চিকন চাল ৬২ থেকে ৭৮ টাকা, মাঝারি চাল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা এবং মোটা চাল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর কারওয়ানবাজারের আড়তদাররা বলছেন, কুষ্টিয়া ও নওগাঁর মিলগুলোয় দাম বাড়ায় রাজধানীতেও প্রভাব পড়েছে। সরু চালের দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। মো. মনিরুল ইসলাম নামে এক পাইকারি বিক্রেতা আমাদের সময়কে বলেন, ‘৫০ কেজির সরু চালের বস্তার দাম ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মাঝারি ও মোটা চালের বস্তায় ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি পড়ছে।’
মালিবাগবাজারের ‘মেসার্স টাঙ্গাইল রাইস এজেন্সির’ আহমদ আলী বলেন, ‘ঈদের পর সব ধরনের চালের দাম বাড়তি রয়েছে। একটু ভালো মানের মোটা চাল ৪৮ টাকার নিচে বিক্রি করা যাচ্ছে না। নুরজাহানের স্বর্ণা বিক্রি করছি ৫০ টাকা কেজি।’
চালকলমালিকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিলমালিক সমিতির’ সাধারণ সম্পাদক একেএম লায়েক আলী বলেন, ‘হাওরে আগাম পানি এসে যাওয়া ও অতিবৃষ্টির কারণে ধানের দাম বেড়েছে। সে কারণে চালের দামও বাড়তি। তবে খুচরায় যতটা বাড়তি রয়েছে, মিলগেটে সে হারে বাড়েনি। ক্রয় রসিদ যাচাই করলে সত্যটা বেরিয়ে আসবে।’
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, হাওরে পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে ৮০ হাজার টন চাল নষ্ট হয়েছে। কিন্তু এবার বোরোতে দুই কোটি সাত লাখ টনের ওপরে চাল উৎপাদিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাকও জানিয়েছেন, এবার হাওরে ‘সামান্য পরিমাণে’ ধান ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সামগ্রিকভাবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধানের আবাদ হয়েছে। এ বছর চালের ঘাটতির আশঙ্কা নেই। এই সময় দাম বাড়ারও কথা নয়।
মসুর ডালের দাম নিয়ে মালিবাগবাজারের গাজী স্টোরের বিক্রেতা মো. মাসুদ রানা বলেন, ‘সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা দানার মসুর ডালের কেজিতে অন্তত পাঁচ টাকা এবং ছোট দানার মসুর ডালের কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘আজ এ বাজারে মোটা দানা ১১০ টাকা এবং ছোট দানা ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে যা যথাক্রমে ১০৫ ও ১৩০ টাকা ছিল।
মৌলভীবাজারের একাধিক পাইকারি বিক্রেতা জানান, বাজারে মসুর ডালের সরবরাহ ও আমদানি- দুটোই স্বাভাবিক রয়েছে। সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই মসুর ডালের দাম বেড়ে গেছে। দেড় সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারদের বাড়তি দামে মসুর কিনতে হচ্ছে বলে বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত সপ্তাহে প্রতি কেজি বড় দানা মসুরের খুচরা মূল্য ছিল ১০৫ টাকা। কিন্তু চলতি সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। গত সপ্তাহের ১৩০ টাকার ছোট দানার মসুরের দামও কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান আমাদের সময়কে বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে লড়াই চলছে। বাংলাদেশও লড়ছে। দ্রব্যমূল্যের দাম যে বাড়ছে, সরকার সে বিষয়ে সচেতন। বাজার নিয়ন্ত্রণে নজরদারি জোরদার, শুল্ক প্রত্যাহারসহ সম্প্রতি বিশেষ টিম গঠন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সমন্বয়ের ঘাটতিতে এসব উদ্যোগের সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। চাল, ডাল, তেল ও আটা কিনে খেতে গরিব মানুষের কষ্ট হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের পরিকল্পনা যেমন থাকতে হবে, তেমনি গরিবের আহার কীভাবে জোগাড় হবে, সেদিকেও নজর দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘টিসিবির মাধ্যমে এক কোটি পরিবারকে পণ্য দেওয়া হচ্ছে। এটা ভালো উদ্যোগ। তবে এ ধরনের কর্মসূচির পরিধি আরও বাড়াতে হবে। আসছে বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। সামান্য ডাল-ভাত কিংবা আটা কিনতে দরিদ্ররা এখন হিমশিম খাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি গরিবের তিন বেলা আহার নিশ্চিতের দিকে সরকারকে বিশেষ নজর দেওয়া উচিত।’
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।