
নামাজ হল ইসলাম ধর্মের মৌলিক কর্মের একটি। প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আবশ্যক। নামাজ হল মুনাজাত বা চুপিচুপি কথা বলা। মু`মিন বান্দা আল্লাহর সঙ্গে ভাববিনিময় করে এ নামাজের মাধ্যমে।
এটা প্রায় সব মুসলমানেরই জানা কথা, তারপরও আমরা অনেকেই নামাজ হতে বিমুখ থাকি। এমনকি নামাজের ওয়াক্ত চলে যায়, নামাজ কাজা হয়ে যায় তাতেও অনেকেরই বিন্দুমাত্র আফসোস নেই!! অথচ নামাজের মধ্যেই আল্লাহ তাআলা বান্দাদের জন্য রেখেছেন অগণিত কল্যাণ ও উপকারিতা এবং দান করেন অকল্পনীয় পুরস্কার।
আমরা অনেকেই জানিনা নামাজ স্বাস্থের জন্যও অনেক উপকারী। নামাজ আদায়ের মাধ্যমে আমাদের শরীরের বেশকিছু অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নাড়াচাড়া হয় যা এক প্রকার ব্যায়াম। এই ব্যায়াম স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারি যা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত।
নামাজ পড়ার স্বাস্থ্য গত উপকারিতা:–
ফজরের সময়: ফজরের সময় নামাজ আদায় করলে সারা রাত ঘুমের পর হালকা অনুশীলন হয়ে যায়। এ সময় পাকস্থলী খালি থাকে তাই কঠিন অনুশীলন শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এ সময়ে নামাজ আদায় করলে নামাজির অবসাদগ্রস্ততা ও অচলতা থেকে মুক্তি পায়। মস্তিস্কে রক্ত চলাচল বেড়ে পুনরায় চিন্তা করার জন্য প্রস্তুত হয়। এ সময়ে দেহ পরিষ্কার, দাঁত পরিষ্কার, অঙ্গ ধোয়া ও পেশাব-পায়খানা থেকে পবিত্রতা অর্জন হয়ে যায়। এতে জীবাণুর আক্রমণ থেকে বাঁচা যায়। এ সময়ে যে নামাজিরা হেঁটে মসজিদে যায় তাদের আত্মা পরিচ্ছন্ন ও প্রশান্ত পরিবেশ থেকে যে সূক্ষ্ম তৃপ্তি লাভ করে – তা সবই উপকারী।
** স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, অন্ত্ররোগ ও আলসার থেকেও বাঁচা যায়।
** রোমের পাদরি হিলার বলেন, ভোরের নামাজের জন্য ওঠা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যাশ্চর্য প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। (প্রার্থনা গ্রন্থ)
জোহরের সময়: মানুষ জীবিকার জন্য দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন কাজ করে। এতে ধুলা, ময়লা, বিষাক্ত কেমিকেল দেহে লেগে শরীরে জীবাণু আক্রমণ করে। সূর্য ঢলে পড়ার সময় গরমের কারণে বিষাক্ত গ্যাস বের হয়ে, মানবদেহে প্রভাব ফেললে বিভিন্ন রোগ হতে পারে। এ সময় ওযু করলে অনেক জীবাণু দূর হয় এবং ক্লান্তি দূর হয়ে দেহ পুনর্জীবন অনুভব করে। নামাজ আদায়ের ফলে এ গ্যাস শরীরে প্রভাব ফেলতে পারে না ফলে দেহ বিভিন্ন রোগ থেকে বেঁচে যায়। এ সময় আল্লাহ নামাজ ফরয করে মানুষের জন্য অনুগ্রহ করেছেন।
আসরের সময়: পৃথিবী বৃত্তীয় ও লম্ব দুই ধরনের গতিতে চলে। যখন সূর্য ঢলতে থাকে তখন পৃথিবীর ঘূর্ণন কমতে থাকে। এমনকি আসরের সময় একেবারেই কমে যায়। এ সময় রাতের অনুভূতি প্রবল হতে থাকে ও প্রকৃতির মধ্যে স্থবিরতা এবং অবসাদগ্রস্ততা প্রদর্শিত হতে থাকে। আসরের নামাজের সময় অবচেতন অনুভূতির শুরু হয়। এ সময় নামাজ আদায় করলে অতিরিক্ত অবসাদগ্রস্ততা, অবচেতন অনুভূতি, মানসিক চাপ ও অস্থিরতা কমে যায়। সুর্যের রশ্মি নামাজিকে প্রশান্তি দান করে।
মাগরিবের সময়: সারাদিন মানুষ জীবিকার জন্য শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম করে কাটায়। মাগরিবের সময় ওযু করে নামাজ আদায়ের ফলে আত্মিক ও দৈহিক প্রশান্তি লাভ হয়। এ সময় নামাজ আদায়ে পরিবারের সকল সদস্যের অংশ গ্রহণ দেখে বাচ্চারাও নামাজের প্রতি আগ্রহী হয়।
এশার সময়: মানুষ কাজ শেষে বাসায় ফিরে রাতে খাবার খায়। এ সময় খেয়ে শুয়ে পড়লে বিভিন্ন রোগ হতে পারে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, রাতে বিছানায় যাওয়ার আগে হাল্কা ব্যায়াম করে নিলে তা স্বাস্থের জন্য ভাল। এশার নামাজ ব্যায়ামের চেয়েও বেশি উপকারি এ নামাজ আদায়ে শান্তি পাওয়া যায়, খাদ্য হজম হয় এবং অস্থিরতা দূর করে।
তাহাজ্জুদের সময়: এ সময় নামাজ আদায়ে অস্বস্তি, নিদ্রাহীনতা, হার্ট, স্নায়ুর সংকোচন ও বন্ধন সহ মাথার বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে কাজ করে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, যারা দূরের জিনিস ভালভাবে দেখতে পায়না তারা এ সময়ে নামাজ আদায় করলে সুফল পাবে। এছাড়াও এ সময়ে নামাজ আদায় করলে বুদ্ধি, আনন্দ এবং অসাধারণ শক্তির সৃষ্টি হয় যা নামাজিকে সারাদিন উৎফুল্ল রাখে।
চিকিৎসা বিজ্ঞান:-
০১। নামাজে যখন সিজদা করা হয় তখন আমাদের মস্তিস্কে রক্ত দ্রুত প্রবাহিত হয়। ফলে আমাদের স্মৃতি শক্তি অনেকবৃদ্ধি পায়। নামাজ মানুষের মস্তিস্কে বন্ধ দরজাগুলো খুলে দেয়।
০২। নামাজে যখন আমরা দাড়াই তখন আমাদের চোখ মুসল্লার সামনের ঠিক একটি কেন্দ্রে স্থির অবস্থানে থাকে ফলে মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।
০৩। নামাজের মাধ্যমের আমাদের শরীরের একটি ব্যায়াম সাধিত হয়। নামাজ মানুষের স্বাস্থ্যের হিফাজত করে, রোগব্যাধি দূর করে, এটি এমন একটি ব্যায়াম যা ছোট বড় সবাই করতে পারে।
০৪। নামাজের মাধ্যমে আমাদের অসাধারন পরিবর্তন এসে মন ও আত্মাকে আলোকিত করে এবং অন্তরকে শীতল ও শক্তিশালী করে।
০৫। নামাজ সকল মানুষের দেহের কাঠামো সঠিক রেখে প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে সজীবতা দান করে ফলে মানুষের অলসতা ও শারীরিক বিকলঙ্গতা দূর হয়ে যায়।
০৬। নামাজ মানুষের ত্বক পরিষ্কার রাখে যেমন ওযুর সময় আমাদের দেহের মূল্যবান অংশগুলো পরিষ্কার করা হয় এর ফলে বিভিন্ন প্রকার জীবানু হতে আমরা সুরক্ষিত থাকি।
০৭। নামাজের জন্য ওযুর সময় মুখমন্ডল যেভাবে পরিস্কার করা হয় তাতে আমাদের মুখে এক প্রকার মেসেস তৈরি হয় ফলে আমাদের মুখের রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায় এবং বলিরেখা কমে গিয়ে মুখের ত্বক স্বতেজ হয়ে চেহারার উজ্জলতা ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে ফলে মুখের দাগ কম দেখা যায়।
০৮। কিশোর বয়সে নামাজ আদায় করলে মন পবিত্র থাকে এর ফলে নানা প্রকার অসামাজিক কাজ থেকে সে বিরত থাকে।
০৯। নামাজ আদায় করলে মানুষের জীবনি শক্তি বৃদ্ধি পায়।
১০। কেবল মাত্র নামাজের মাধ্যমেই চোখের নিয়মিত যত্ন নেওয়া হয়। ফলে অধিকাংশ নামাজ আদায় কারী মানুষের দৃষ্টি শক্তি বজায় থাকে।
নামাজ আদায়ের পুরস্কারসমূহ:-
** কুরআনুল কারিমের ঘোষণা অনুযায়ী নামাজি ব্যক্তিকে জান্নাতে এমন লোকদের সঙ্গে রাখা হবে কেয়ামতের দিন যাদের কোনো ভয়ভীতি এবং কোনো চিন্তা থাকবে না।
** আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নামাজি ব্যক্তিদের ভালোবাসেন।
** নামাজ মানুষের রুটি-রুজিতে বরকত দান করে।
** নামাজি ব্যক্তিকে আল্লাহ সুস্থতা দান করেন।
** নামাজ আল্লাহর ভয়াবহ আজাব থেকে হিফাজত করে।
** ফেরেশতাগণ নামাজি ব্যক্তির হিফাজতের দায়িত্বে থাকেন এবং মাগফিরাত কামনা করেন।
** নামাজি ব্যক্তির ঘরে আল্লাহ রহমত ও বরকত নাজিল হতে থাকে।
** নামাজ শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আশ্রয়দান করে।
** বিশেষ নূর দ্বারা নামাজির ব্যক্তির চেহারাকে আলোকিত করে দেন।
** নামাজি ব্যক্তির মধ্যে আল্লাহর দয়ার প্রকাশ পায় অর্থাৎ নামাজি ব্যক্তির অন্তর সর্বদা নরম থাকে।
** নামাজি ব্যক্তিকে জাহান্নামের ভয়াবহ আযাব থেকে নাজাত দেয়া হবে।
** নামাজি ব্যক্তির আখিরাতে সব মাঞ্জিল পার হবে দ্রুততার সঙ্গে এমনকি পুল সিরাতও।
** নামাজ আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।
ইসলামের অনুসারী সব মুসলিমের ওপর নামাজ হলো ফরজ ইবাদত। আল্লাহতাআলা এই ফরজ ইবাদত পালনে মুসলিম উম্মাহকে তাওফিক দান করুন। সুতরাং যে ব্যক্তি যথাযথ নিয়মে নামাজ আদয় করবে, আল্লাহ তাআলা দুনিয়া এবং আখিরাতে তার জন্য রেখেছেন অসংখ্য নিয়ামত এবং অসংখ্য পুরস্কার।
নামাজের অতুলনীয় উপকারিতা ও পুরস্কার লাভের সৌভাগ্য লাভ করে সত্যিকারের মাওলার দিদারে আমাদের আত্ম নিয়োগ করার তাওফিক দান করুন।
— আমিন।