আজ ১৪ মার্চ, আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস। ১৯৯৮ সাল থেকে বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন নদ-নদীকে বাঁচানোর অঙ্গীকার নিয়ে দিবসটি পালন করছে। দিবসটিকে সামনে রেখে নদী রক্ষায় সরকারের নেওয়া মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন পরিবেশবিদসহ নদী ও নৌ পরিবহন বিষয়ক গবেষকরা।
নদীকৃত্য শব্দের অর্থ হলো নদী রক্ষায় করণীয়।
১৯৯৭ সালের মার্চে ব্রাজিলের কুরিতিয়া শহরে পরিবেশবাদীদের এক আন্তর্জাতিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিভিন্ন দেশের পরিবেশকর্মীরা নিজ নিজ দেশের নদ-নদীগুলোর করুণদশা তুলে ধরে সেগুলো রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। ওই সমাবেশ থেকে সিদ্ধান্ত হয়, প্রতি বছর ১৪ মার্চ আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস পালন করা হবে। মূলত নদীর প্রতি মানুষের করণীয় কী, নদী রক্ষায় মানুষের দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতা কতটুকু; এসব বিষয় স্মরণ করিয়ে দিতে দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে নদ-নদী সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে ও নদীভাবনা সৃষ্টি করতে একটি বেসরকারি সংগঠন সর্বপ্রথম ১৯৯৮ সালে আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস পালন করে। বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করে পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন, গ্রিন ক্লাব অব বাংলাদেশ, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্ট, প্রভারটি ইমুলিনেশন অ্যাস্ট্যিান্স সেন্টার ফর অ্যাভরিহোয়্যার (পিস), ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট, মিডিয়া ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডেভেলপমেন্ট (মেড) এবং নদী বাঁচাও আন্দোলনসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন সেমিনার, আলোচনা সভা, মানববন্ধন এবং গণমাধ্যমে বিবৃতি প্রদানের মাধ্যমে প্রতি বছর দিবসটি পালন করে আসছে।
নদীকৃত দিবসকে সামনে রেখে নানান কর্মসূচি দেওয়ার পরও কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া যায়নি। একসময়ে বাংলাদেশে অন্তত ১২০০ নদী জালের মতো বিস্তৃত থাকলেও সেই সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) হিসেবে, বর্তমানে দেশে ছোটবড় মিলিয়ে অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর সংখ্যা ৩৮৩টি। তবে দূষণ, দখল, ভরাট ও অবহেলার কারণে এসব নদীর এক-তৃতীয়াংশ এখন বিপন্নপ্রায়। এছাড়া বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশনের তথ্য মতে, ৫৭টি আন্তসীমান্ত নদী রয়েছে; যার মধ্যে ৫৪টি বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের ভেতর দিয়ে এবং তিনটি বাংলাদেশ ও মায়ানমারের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত। সব মিলিয়ে পাউবোর হিসেবে নদীর সংখ্যা ৪৪০। তবে সংস্থাটির তালিকার বাইরে বাস্তবে আরো চার শতাধিক নদী আছে।
নদী ও নৌ পরিবহন বিষয়ক গবেষকরা বলছেন, নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের স্বার্থে সচল নদীগুলোকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা যেমন জরুরি, তেমন বিলুপ্ত সকল নদ-নদীকে উদ্ধার ও খননের মাধ্যমে প্রবহমান করাও আবশ্যক। তা না হলে অদূর ভবিষ্যতে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা রয়েছে। তাঁদের মতে, বর্তমান সরকার গ্রহণ করেছে, তা যুক্তিসঙ্গত ও সাধুবাদযোগ্য। কিন্তু বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা রয়েছে।
নৌ-সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে কালের কণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশের মতো নদীমাতৃক যেকোনো দেশে নদ-নদীসহ উন্মুক্ত জলাভূমির অনেক গুরুত্ব রয়েছে। বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই গুরুত্ব বহুগুণ বেড়েছে। এছাড়া দেশের এক-পঞ্চমাংশ এলাকা উপকূলীয় জনপদ। নদীভাঙন, বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে উপকূলকে রক্ষার ক্ষেত্রে সেখানকার নদ-নদীগুলোর সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ দরকার।
সারা দেশে বিক্রি হবে টিসিবির পণ্য
নদী রক্ষায় সরকারের নেওয়া মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়ে ওয়াটার কিপার বাংলাদেশের কর্মকর্তা মো. নূর আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবসহ নানা কারণে দেশের নদ-নদীর অস্তিত্ব হুমকির মুখে। অথচ দেশের মধ্যে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ নৌপথ ও নৌ যোগাযোগের গুরুত্ব অপরিসীম। সেজন্য বহমান নদীগুলোর সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ যেমন জরুরি, তেমন বিলুপ্ত সকল নদীকে উদ্ধার করাও অপরিহার্য।