বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার আকাশ থাকবে ঘুড়িওয়ালাদের দখলে। অর্থাৎ সেখানে শোভা পাবে নানা রং আর বাহারি ঘুড়িদের সাম্যবাদ। বলছি পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সাকরাইন উৎসবের কথা। একে ঘুড়ি উৎসব বা পৌষ সংক্রান্তিও বলা হয়। আগে এ উৎসবটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে পুরান ঢাকায় সাড়ম্বরে পালিত হয় এ দিনটি। উৎসবে অংশ নেন সব ধর্মের সব বয়সী মানুষ। ঢাকার অন্যান্য এলাকার তরুণ-তরুণীরাও উৎসবে যোগ দিতে ছুটে যান পুরান ঢাকায়।
এছাড়া এবারের আয়োজনটি আরও বেগবান হবে সেখানে। কারণ প্রথমবারের মতো ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এ ঐতিহ্যবাহী সাকরাইন উৎসবের আয়োজন করতে যাচ্ছে। ‘এসো ওড়াই ঘুড়ি, ঐতিহ্য লালন করি’ স্লোগানে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা থেকে রাজধানীর আকাশে পুরান ঢাকার ৭৫টি ওয়ার্ড একযোগে এই উৎসবে ঘুড়ি ওড়ানো হবে। গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। জানানো হয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটির আকাশ রাঙাতে করপোরেশনের ক্রীড়া ও সংস্কৃতিবিষয়ক স্থায়ী কমিটির উদ্যোগে এই উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে।
মূলত; পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়া, মুরগীটোলা, ধূপখোলা, দয়াগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী, নারিন্দা, সূত্রাপুর, কাগজিটোলা, বাংলাবাজার, লক্ষ্মীবাজার, কলতাবাজার, ধোলাই খাল, শাঁখারি বাজার, রায়সাহেব বাজার, নবাবপুর, বংশাল, নাজিরাবাজার, তাঁতী বাজার, লালবাগ ও এলাকার মানুষ এ উৎসবে দিনব্যাপী ঘুড়ি উড়ান। আয়োজন করেন নানা খাবারের। এছাড়া সন্ধ্যায় আতশবাজী ফোটানো এ উৎসবের অন্যতম অঙ্গ।
সাকরাইনের দিনে সকাল থেকেই ছাদে ছাদে শুরু হয়ে যায় ঘুড়ি ওড়ানোর উন্মাদনা। ছোট বড় সবার অংশগ্রহণে মুখরিত থাকে প্রতিটি ছাদ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে উৎসবের জৌলুস। আর আকাশে বাড়বে ঘুড়ির সংখ্যা। সকালের তুলনায় বিকালে এ উন্মাদনা পরিপূর্ণতা লাভ করে। ছাদের উপর চলবে গানবাজনা আর খাওয়া-দাওয়া। সে সঙ্গে আনন্দের উত্তাপকে আরও এক ধাপ বাড়িয়ে দেয় ঘুড়ির কাটাকাটি খেলা।
এছাড়া ঘরে ঘরে তৈরি হবে মুড়ির মোয়া, বাকরখানি আর পিঠা বানানোর ধুম। বর্তমানে এ উৎসবে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। অর্থাৎ সন্ধ্যার পর থেকেই শুরু হয়ে যায় আতশবাজী ও ফানুস উড়ানো। সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এসব এলাকায় চলে আতশবাজির খেলা।
সাকরাইনে পুরান ঢাকায় শ্বশুরবাড়ি থেকে জামাইদের নাটাই, বাহারি ঘুড়ি উপহার দেওয়া এবং পিঠার ডালা পাঠানো একটি অবশ্য পালনীয় অঙ্গ। ডালা হিসেবে আসা ঘুড়ি, পিঠা আর অন্যান্য খাবার বিলি করা হয় আত্মীয়-স্বজন এবং পাড়ার লোকদের মধ্যে।
এ উৎসবকে মাথায় রেখে গত এক সপ্তাহ পুরান ঢাকার বায়ান্নো বাজার তেপ্পান্ন গলির অধিকাংশ গলিতে আর খোলা ছাদে হয়েছে সুতা মাঞ্জা দেওয়ার ধুম।
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।