ঐতিহ্যবাহী পুরাতন ঢাকার অবহেলিত এক ক্যাম্পাসের নাম সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ। ১৯৪৯ সালের ১১ নভেম্বরে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুর দিকে এই কলেজটির নাম ছিল ‘কায়েদ-ই-আজম কলেজ’। নানান চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে কলেজটির নাম পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক গুরু ও গনতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নামানুসারে কলেজটির নাম রাখা হয় ‘শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ’। ১৯৮৪ সালের ১ নভেম্বর কলেজটি সরকারি কলেজে পরিণত হলে এর নাম হয় ‘সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ’। ২০০৪-২০০৫ শিক্ষাবর্ষে কলেজটিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক (সম্মান) কোর্স চালু করা হয়। আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্যে ও শিক্ষার গুনগত উন্নয়নের জন্যে ঢাকার যে ৭ (সাত) টি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত করে তারমধ্যে অন্যতম হলো ‘সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ’। এখন বর্তমান প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন অনুষদের ১৯ টি ডিপার্টমেন্ট রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ার প্রায় ৪ বছর হলেও এখনো নানা রকম না পাওয়া অধিকার নিয়ে হতাশ শিক্ষার্থীরা।
সাত কলেজের মধ্যে ছয়(৬)টি’তেই রয়েছে একাধিক আবাসিক হল কিন্তু সোহরাওয়ার্দী কলেজে নেই কোন হলের ব্যবস্থা । এই নিয়ে নানান ভোগান্তিতে রয়েছে শিক্ষার্থীরা, আবাসিক এই সমস্যার সমাধান কবে মিলবে তা আদতে কেউ জানেন না। এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর একটি বড় অংশ আসে গ্রামের মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে। কলেজের ভর্তি হওয়ার পর আশে-পাশের এলাকায় মেস বা বাসা বাড়া করে শুধু পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া তাদের অধিকাংশের পক্ষে সম্ভব হয়না। ফলে তাদের বাধ্য হয়ে খণ্ডকালীন চাকরিতে (পার্টটাইম জব) যোগ দিতে হয়। এই জন্যে তারা পড়াশোনায় পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারেন না। তাই ব্যাহত হচ্ছে তাদের পড়াশোনা। দিনে দিনে এই আবাসন সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অন্যদিকে সোহরাওয়ার্দী কলেজের কোন নিজস্ব বাস ব্যাবস্থা নেই। সাত কলেজের মধ্যে ছয়(৬)টি’তেই রয়েছে একাধিক বাস। এই নিয়ে ঢাকার অদূরে শিক্ষার্থীরা নানান ভোগান্তি পোহাতে হয়। প্রতিষ্ঠার এত বছর পরেও বাস সার্ভিস দিতে না পারায় কলেজের প্রতি হতাশ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ এই জন্যে প্রশাসনিক ব্যার্থতার দায় করে আঙুল তুলছে। তারা চায় দ্রুত যেন মিটে এই সমস্যার সমাধান হয়।
সোহরাওয়ার্দী কলেজ লাইব্রেরীর জন্য আলাদা কোন ভবন বা সুপরিসর রুম নেই। মসজিদ পাশে নামকাওয়াস্তে মূল লাইব্রেরী। এখানকার শিক্ষার্থীদের থেকে জানা যায় যে ,
ছোট একটি লাইব্রেরী রয়েছে তবে এই
পুস্তকের রক্ষণাবেক্ষণে তেমন কোন সচেতনতা নেই। কলেজ লাইব্রেরিতে ক্যাটালগ নেই, বই ইস্যু এবং ফেরত নেওয়ার ব্যাপারেও অব্যবস্থা বিদ্যমান। এসব অবস্থা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে,
লাইব্রেরী শিক্ষার্থীর জন্য তেমন কোন কাজে আসেনা। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মনে করেন
তাদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য আরও বইপত্র সংগ্রহ করা জরুরি। বই পড়ার জন্য উন্মুক্ত পরিবেশ ও লাইব্রেরী স্থান সুন্দর ও মনোরম প্রয়োজন।
১৯৪৯ সাল থেকে ২০২১ সাল এই ভূখণ্ড আমূল পরিবর্তন হলেও তেমন পরিবর্তন হয়নি সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ। শিক্ষার্থীদের নানা অধিকার প্রতিষ্ঠায় ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’ ও সম্প্রতি ‘ছাত্র অধিকার পরিষদ’ বাদে ক্রিয়াশীল কোন ছাত্র সংগঠন নেই। ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি স্থিতিশীল পরিবেশ হলেও শিক্ষার্থীদের চাহিদা মেটাতে একপ্রকার ব্যর্থ সংগঠনগুলো। দেশ আজ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে। উন্নয়নের বিস্ময় গোটা বাংলাদেশ হলেও কেন জানি অজানা কারনে তেমন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগানি পুরান ঢাকার এই কলেজটিতে। আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্যে কিছু পরিবর্তন আবশ্যক। দেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে, এই উন্নয়নের মহাসড়কে কলেজটিকে সামিল করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে।