‘হিজড়াও মানুষ’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে ঢাকার কামরাঙ্গীরচরের লোহার ব্রীজ এলাকায় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের দ্বীনি শিক্ষার জন্য ৫ নভেম্বর দেশের ইতিহাসে প্রথম মাদরাসা চালু হয়। হিজড়াদের জন্য একক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটিই প্রথম, এর আগে বাংলাদেশে কোনো স্কুল-কলেজ শুধু হিজড়াদের জন্যই গড়ে উঠেছে এমনটি শোনা যায়নি।
হিজড়াদের জন্য দেশের প্রথম এই মাদরাসার নাম ‘দাওয়াতুল কোরআন তৃতীয় লিঙ্গের মাদরাসা’। সরকারি হিসেব মতে, দেশে প্রায় ১০ হাজার হিজড়া রয়েছে। কিন্তু বেসরকারি তথ্য মতে, সংখ্যাটি ৫০ হাজারেরও বেশি।
দাওয়াতুল কুরআন মাদরাসার আয়োজকরা বলছেন, আমাদের সমাজে হিজড়ারা অবহেলার শিকার। মানুষ তাদের ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখে। এদের উন্নত পড়াশোনা এবং সামাজিক মর্যাদাপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করাই আমাদের অন্যতম উদ্দেশ্য।
মাদরাসাটির শিক্ষা সচিব মাওলানা আবদুল আজিজ হুসাইনি বলেছেন, এখানে হিজড়াদের কোরআন শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষাও দেওয়া হবে। এতে করে হিজড়াদের নৈতিক পাঠের পাশাশি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি লাভের যোগ্যতাও তৈরী হবে। আবদুল আজিজ হুসাইনি আরো বলেন, যাত্রাবাড়ি-ডেমরাসহ কয়েক জায়গায় আমরা বিচ্ছিন্নভাবে হিজড়াদের কোরআন শেখাতাম। এমন ২০-২৫জনকে নিয়ে আমরা মাদরাসাটি শুরু করেছি।
মাদরাসাটি একটি তিন তলা ভবনে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রতি তলায় ১২০০ বর্গফুট জায়গা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে হিজড়াদের শিক্ষার জন্য ১০জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এই মাদরাসায় ভর্তি হওয়ার জন্য কোনো বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়নি। এর কারণ উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানটির মহাসচিব বলেন, মানবশিশু হিজড়া কিনা এটা নির্ণয় করতে বেশ সময় লাগে। কখনো কখনো ১৫/১৬ বছরও লেগে যায়। তাই আমাদের মাদরাসায় ভর্তির জন্য কোনো বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়নি। যেকোনো বয়সের তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ এখানে এসে ভর্তি হতে পারবেন।
আনন্দের ব্যাপার হলো, মাদরাসায় পড়াশোনা করা এবং থাকা-খাওয়ার যাবতীয় খরচ বহন করবে মরহুম আহমদ ফেরদৌস বারী চৌধুরী ফাউন্ডেশন।
বাংলাদেশ সরকার হিজড়াদের তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি দেওয়র পরও তাদের পড়াশোনার তেমন কোনো ব্যবস্থা ছিলো না। দাওয়াতুল কুরআন মাদরাসা এ ক্ষেত্রে যে দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে, বিশ্বজুড়েই প্রশংসা কুড়াবে।
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।