পাসপোর্ট কি এটা আমরা সবাই কমবেশি জানি। দেশের বাইরে যেতে হলে সবার আগে এই জিনিসটির প্রয়োজন হয়ে থাকে। এক কথায় পাসপোর্ট হল দেশের সরকার দ্বারা দেশের নাগরিকদের দেশের বাহিরে যাবার বৈধ অনুমতি সম্বলিত একটি বই, যেখানে বিভিন্নও এম্বেসির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের ভিসা লাগানো হয়। বাংলাদেশ পাসপোর্ট হল বাংলাদেশ সরকার দ্বারা প্রদত্ত সেই অনুমতি সম্বলিত বই। বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য সরকার তিন ধরনের বাংলাদেশ পাসপোর্ট ইস্যু করে থাকেঃ
বাংলাদেশ পাসপোর্ট তৈরি নিয়ে অনেকের মনে অনেক ধরনের কনফিউশন বা দ্বিধা এমন কি ভীতিও আছে। এটা থাকা মোটেও কোন দোষের কিছু না। যে কাজ আপনি কখনো করেননি সেটা নিয়ে ভীতি থাকতেই পারে। তাছাড়া বাংলাদেশের সরকারী পাসপোর্ট অফিসগুলোর যে অবস্থা তাতে এটা মোটেই অস্বাভাবিক না। সরকারী ওয়েবসাইট বা বিভিন্নও ব্লগ গুলোতে যতটা সহজ ভাবে বাংলাদেশ পাসপোর্ট তৈরির ব্যাপারে লেখা হয়ে থাকে, বাস্তব অবস্থা অনেক ক্ষেত্রেই মোটেই তেমন না।
হয়তো ঢাকা চট্টগ্রাম বা সিলেটের মত প্রধান জেলাগুলোতে এখন বেশ ভাল ব্যাবস্থা করা হয়েছে। সেখানে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে অনেকেই গ্রাহকদের সেবা দিতে আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু দেশের অন্যান্য আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসগুলোর বেশিরভাগের অবস্থা পুরোপুরি ভাবে ভিন্ন। সেখানে এখনো আগের মতই অনিয়ম চলে এবং কিছু কিছু জায়গায় আপনাকেও অনিয়মের আশ্রয় নিতে হবেই যদি সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে চান। অন্যথায় অহেতুক ঝামেলাতে পড়ে যাবেন এবং সময় মত পাসপোর্টও পাবেন না।
তবে প্রিয় পাঠক, ভয় পাবার কোন কারন নাই। যত সমস্যা, তত সমাধান। অতি সম্প্রতি আমি আমার পাসপোর্ট করেছি এবং সেখানে যেসব সমস্যার সম্মুখিন হয়েছি, এবং সেগুলো থেকে কিভাবে পরিত্রান পেয়েছি সেগুলো শেয়ার করতেই আজকের এই ব্লগটা লেখা।
যারা একেবারেই নতুন পাসপোর্ট করতে চান তাদের প্রক্রিয়া পুরাতন পাসপোর্টধারিদের চাইতে আলাদা। তাদেকে একদম প্রথম থেকে সব শুরু করতে হয়। আমি নীচে ধাপে ধাপে আপনার করনীয় গুলো লিখে দিচ্ছি। এই ধাপ গুলো যদি ক্রম অনুসারে অনুসরণ করেন তাহলে সবচাইতে কম সময়ে এবং কম ঝামেলায় পাসপোর্ট করতে পারবেন।
উল্লেখ্য এই যে অনলাইন এবং অফ লাইন দুই ভাবেই পাসপোর্ট ফর্ম পূরণ করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে তেমন একটা পার্থক্য নেই। অনলাইনে পূরণ করলে যে বেশী সুবিধা পাওয়া যাবে এই ধারণা পুরোই ভুল। তাই আপনার যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে আপনি ফর্ম পূরণ করতে পারেন। আমি আজকে অফ লাইনে পাসপোর্ট করার প্রক্রিয়া নিয়ে কথা বলবো কারন আমাদের দেশের বেশিরভাগ বাংলাদেশী পাসপোর্ট এখনো অফলাইনেই করা হয়ে থাকে।
নতুন বাংলাদেশ পাসপোর্ট করতে যা যা লাগবে
প্রথম ধাপটিই হল টাকা জমা দেয়া। এটার মাধমেই আপনার পাসপোর্ট তৈরি প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। রাষ্ট্রীয় ব্যাংক সোনালি ব্যাংক ছাড়াও এই ৫ টি ব্যাংকে টাকা জমা দেয়া যাবে।
উল্লেখ্য এই যে আপনি যে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে পাসপোর্ট করাবেন, সেই এলাকার ব্যাংকের শাখাগুলোতে টাকা জমা দেয়াটা ভাল হবে। ব্যাংকে গিয়ে যেকোন কাউন্টারে বলতে হবে যে আপনি পাসপোর্ট ফি জমা দিতে চান। তাহলেই তারা আপনাকে পাসপোর্ট ফি প্রদানের বিশেষ স্লিপ দিয়ে সাহায্য করবে। সাথে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে যাবেন, অনেক সময় অনেক অফিসার সেটা দেখতে চাইতে পারেন। সোনালি ব্যাংক এ ভিড় বেশী হয় স্বাভাবিক ভাবেই। তাই যদি আপনার পাসপোর্ট অঞ্চলে উল্লেখিত ব্যাংকগুলোর কোন শাখা থাকে তাহলে ভিড় এড়াতে পারবেন। তবে সব পাসপোর্ট অঞ্চলে সেইসব ব্যাংক এর শাখা নাও থাকতে পারে। কিন্তু সোনালি ব্যাংক আপনি পাবেন অবশ্যই।
আপনার যদি তাড়া না থাকে তাহলে সাধারন পাসপোর্ট করতে দিতে পারেন। সাধারণ পাসপোর্ট পেতে ২১ দিন সময় লাগে। এক্ষেত্রে ২১ দিনের কথা বলা হলেও আসলে অনেক ক্ষেত্রেই দেরি হয়। তাই দেড় মাস সময় লাগবে এটা ধরে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
যদি আপনার জরুরী দরকার হয় তাহলে জরুরী ফি দিয়ে আর্জেন্ট পাসপোর্ট করাতে পারবেন। ৭ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট পাবার কথা। তবে এখানেও ৭ দিনের কথা বলা হয়ে থাকলেও কমপক্ষে ১৫ দিন সময় লাগতে পারে এটা ধরে রাখবেন।
সাধারণ বা জরুরী পাসপোর্ট তৈরিতে এর বেশী কোথাও কোন খরচ নেই। পাসপোর্ট ফি প্রদানের রশিদটি যত্ন সহকারে সংরক্ষন করবেন। কারন এটা হারিয়ে ফেললে আপনাকে আবার টাকা জমা দিয়ে রশিদ নিতে হবে।
এর পর http://www.passport.gov.bd/ এই ঠিকানায় গিয়ে বাংলাদেশ পাসপোর্ট ফর্ম ডাউনলোড করবেন। ওয়েবসাইটে যাবার পর দেখবেন Download Form নামে একটি বাটন আছে। এর উপর মাউস (কারসার) রাখলে দেখবেন একটি ড্রপ ডাউন মেনু আসবে। সেখানে ডি আই পি ফর্ম -১ এবং ডি আই পি ফর্ম -২ নামে ২ টি ফর্ম পাবেন। ক্লিক করে আপনি শুধু ডি আই পি ফর্ম -১ নামের বাংলাদেশী পাসপোর্ট ফর্ম ডাউনলোড করবেন। নীচের স্ক্রিনশট দেয়া হল।
আপনাদের সুবিধার্থে ফরমটিও দেখান হল, ইচ্ছা করলে এখান থেকেও ডাউনলোড করে নিতে পারেন। নীচের DOWNLOAD PASSPORT FORM এ ক্লিক করে ফর্মটি ওপেন করুন। এরপর রাইট মাউস ক্লিক করে সেভ অ্যাজ এ ক্লিক করে পিডিএফ /Adobe Acrobat Document ফরম্যাটে ফাইলটি সেইভ করুন। অথবা ফর্মের নীচের ডাউনলোড আইকন এ ক্লিক করলেও হবে। এর পর প্রিন্ট দিন। রঙিন অথবা সাদা কালো, যেভাবে ইচ্ছা প্রিন্ট করতে পারবেন কোন সমস্যা নাই। ফর্মের ফটোকপিও গ্রহণযোগ্য। একবারে অনেক গুলো কপি করে নিবেন।
DOWNLOAD PASSPORT FORM – বাংলাদেশী পাসপোর্ট ফর্ম ডাউনলোড করুন
(যারা অনলাইনে ফর্ম পূরণ করবেন তাদের ক্ষেত্রে ফর্ম ডাউনলোড করার প্রয়োজন নাই। উপরোক্ত ঠিকানাতে গিয়ে অনলাইনে ফর্ম পূরণ করে তারপর পূরনকৃত ফর্মটি ডাউনলোড করতে হবে। এর পর প্রিন্ট দিতে হবে। অনলাইন আর অফলাইন ফর্ম পূরণ প্রক্রিয়াতে শুধু এটুকোই পার্থক্য। আর বাকি প্রক্রিয়া গুলো সম্পন্ন করতে অফলাইন এবং অনলাইন এর সব কাজ এক এবং কোন পার্থক্য নাই।)
** অনেকেই আপনাকে বলতে পারে যে পাসপোর্ট অফিস থেকেই ফর্ম সংগ্রহ করা ভাল। নিঃসন্দেহে এটা একটি ভাল উপদেশ। কিন্তু বাংলাদেশের অনেক আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে ফর্ম থাকেই না। শেষ হয়ে যাবার পরেও তারা ব্যাবস্থা নেয় না। এমন অবস্থায় কোন আবেদনকারী গেলে তাঁকে বলা হয় নিকটস্থ ফটোকপির দোকান থেকে ফর্ম সংগ্রহ করতে। তাই কোন কারণে ফর্ম নিতে ভুলে গেলে আর অফিসে ফর্ম না পাওয়া গেলে ভড়কে যাবেন না। কাছাকাছি যেকোন ফটোকপির দোকানে গেলেই বাংলাদেশ পাসপোর্ট ফর্ম পেয়ে যাবেন।
যেভাবেই ফর্ম নেন না কেন, অবশ্যই একাধিক কপি সাথে রাখবেন কারন একটু মাত্র ভুল বা কাটাকাটির জন্য ফর্ম বাতিল হবে। আর ভুল সবাই করতেই পারে, এটাই স্বাভাবিক। তাই কাটাকাটি এড়ানোর জন্যে একাধিক কপি ডি আই আই পি -১ ফর্ম সাথে রাখুন।
এই ধাপে এসে আপনি বাংলাদেশ পাসপোর্ট ফর্ম পূরণ করবেন। আগেই বলেছি যে একাধিক কপি রাখবেন যাতে ভুল বা কাটাকাটি না হয়। এবার নীচে এম্বেড করা সরকারী নির্দেশিকাটি ভালভাবে পড়ে ফর্মটি পূরণ করা শুরু করবেন। খুব মনোযোগ সহকারে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র এবং শিক্ষাগত সার্টিফিকেট সামনে রেখে সেগুলো দেখে দেখে ফর্মটি পূরণ করতে হবে। বানান ভুল থেকে সাবধান থাকতে হবে এবং সব সঠিক তথ্য দিতে হবে। যেখানে যেখানে সাক্ষর করতে হবে, তার সব সাক্ষর যেন একই রকম এবং একই ভাষায় হয়ে থাকে। কোথাও ইংরেজি আবার কোথাও বাংলাতে সাক্ষর করলে সমস্যা হবে।
ফর্ম পূরণ হলে যেখানে ছবি লাগানোর কথা সেখানে আঠা দিয়ে ছবি লাগাবেন এবং ডান পাশে ব্যাংকে টাকা জমার রশিদটিও আঠা দিয়ে লাগাবেন। ছবিতে দেখান হল যে কিভাবে কোথায় ছবি এবং রশিদ লাগাবেন।
টাকা জমা রশিদ অ ছবি ফর্মে লাগানোর পর একটি সত্যায়ন ও একটি প্রত্যায়ন আপনার লাগবে। পাসপোর্ট ফর্মের একটি অংশ আছে যেখানে প্রত্যায়নকারী তাঁর তথ্য ব্যাবহার করে প্রত্যায়ন করবেন। এটা যেকোন সরকারী প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তা দ্বারা করা সম্ভব যিনি আপনাকে চেনেন। ওই একই ব্যাক্তি আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপিও সত্যায়িত করে দিবেন। প্রত্যায়ন অংশে তিনি তাঁর নাম মোবাইল, নম্বর এবং অফিশিয়াল সিল প্রদান করবেন।
না চিনলেও সমস্যা নাই। কাজটি আপনি যেকোন নোটারি থেকেও করাতে পারবেন। সাধারণত আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ও সরকারি কোর্টগুলো কাছাকাছিই থাকে। কোর্টের আসে পাশে অনেক নোটারি পেয়ে যাবেন। তাঁর কাছ থেকে সত্যায়ন ও প্রত্যায়ন করিয়ে নিতে পারবেন।
সত্যায়ন ও প্রত্যায়নের কাজ শেষ হলে আপনার বাংলাদেশ পাসপোর্ট ফর্ম সাবমিট করার পালা। ফর্ম সাবমিট করার পূর্ব পর্যন্ত আপনার পাসপোর্ট অফিসে যাবার দরকারই পড়বে না। তবে জমা দিতে হলে অবশ্যই আপনার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে আপনার পূরণকৃত ফর্মটি জমা দিতে হবে। যাবার আগে অবশ্যই অফিসের ঠিকানা জেনে নিবেন। বর্তমানে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট করার জন্যে দেশের সব পাসপোর্ট অফিসই সংস্কার করা হয়েছে এবং অনেকগুলোরই স্থান পরিবর্তন করা হয়েছে। সাবমিটের ফর্মটি অবশ্যই আরেকবার ভাল করে সব চেক করে নিবেন।
ফর্ম জমা দেবার সময় যা যা লাগবেঃ
প্রথমে ফর্মটি একটি নির্দিষ্ট কক্ষে জমা নিবে। সেখানে আপনার তথ্যও গুলো ফর্ম থেকে কম্পিউটার সফটওয়্যারে নেয়া হবে। এজন্য আপনাকে লম্বা সিরিয়াল ধরতে হতে পারে। আপনার তথ্য সফটওয়্যারে নেয়া হলে আপনার ফর্মে একটি সিল মেরে ফর্ম সহ আপনাকে অন্য একটি কক্ষে যেতে বলা হবে।
এর পরের কক্ষে ঢোকার জন্যেও লাইন ধরতে হবে। সেখানে ফর্ম থেকে তথ্য নিয়ে আরেকবার সফটওয়ারের তথ্যের সাথে মিলিয়ে চেক করা হবে। এরপর আপনার ফিঙ্গার প্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ নেয়া হবে। দুই হাতের তর্জনী ও বৃদ্ধাঙ্গুলির, মোট ৪ আঙ্গুলের ছাপ নেয়া হবে। এর পর একটি ডিজিটাল ডিসপ্লেতে (সাধারণত ওয়াকম থাকে) আপনার সাক্ষর করতে হবে। ফর্মে যে সাক্ষর করেছেন ঐ সাক্ষরই করবেন এখানে। এরপর কর্মকর্তারা ডি এস এল আর ক্যামেরায় আপনার ছবি নিবেন। (তাই এই কক্ষে ঢোকার আগে একটু ফ্রেশ হয়ে ঢুকতে পারলে ভাল হয় কারন ভিতরে কোন আয়না চিরুনির ব্যাবস্থা সাধারণত থাকেনা।)
** অবশ্যই সাদা বাদে অন্য রঙের শার্ট পড়ে যাবেন। আপনার ছবি তোলা হবে একটি সাদা পর্দার বা বোর্ডের সামনে। তাই অবশ্যই সাদা রঙের শার্ট এড়িয়ে চলবেন। অনেকেই টি শার্ট বা পোলো শার্ট পড়ে ছবি উঠার জন্যে যান। এটা ঠিক না। মানসম্মত ছবির জন্যে অবশ্যই কলার সহ শার্ট পড়ে যাবেন।
এরপর একটি টোকেন আপনাকে দেয়া হবে। টোকেন বলতে বুঝায় কম্পিউটারে প্রিন্ট করা একটি কাগজ যেখানে আপনার তথ্য, পাসপোর্ট ডেলিভারি তারিখ এবং আরও কিছু তথ্য থাকবে। রুম থেকে বের হয়ে যাবার আগে টোকেনটি অবশ্যই ভালভাবে চেক করে নিবেন। কারন এই টোকেনে যেভাবে দেয়া আছে, আপনার পাসপোর্টে তথ্যগুলো ঠিক সেভাবেই আসবে। তাই যদি কোন ভুল ভ্রান্তি চোখে পড়ে তাহলে সেটা সাথে সাথে পাসপোর্ট কর্মকর্তাদের জানান। তারা তখন প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতে পারবে।
মুলত এর সাথে সাথে আপনার বাংলাদেশ পাসপোর্ট তৈরির প্রক্রিয়াটি শেষ। টোকেনটি নিয়ে যত্ন করে সংরক্ষন করতে হবে। কারন বাংলাদেশ পাসপোর্ট ডেলিভারির দিন এই টোকেন আপনার অবশ্যই লাগবে। এছাড়া আপনার মোবাইল নম্বরে একটি মেসেজও চলে যাবে যখন পাসপোর্টটি ঢাকা থেকে তৈরি হয়ে আবার আপনার আঞ্চলিক অফিসে এসে পৌঁছাবে। সেখান থেকেই সশরীরে উপস্থিত হয়ে বাংলাদেশ পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে হবে টোকেন এ উল্লেখিত তারিখে সাধারণত আঞ্চলিক অফিসে পাসপোর্ট পৌছায় না। অনেক ক্ষেত্রে কিছুদিন দেরিও হয়ে থাকে। তাই ভাল হয় যদি আসার আগে খোজ নিয়ে আসতে পারেন।
আপনার পাসপোর্ট তৈরি প্রক্রিয়ার আপডেট জানতে চাইলে সেটা দুই ভাবে করতে পারেবেনঃ মোবাইল এস এম এস এবং অনলাইন স্ট্যাটাস চেক।
এসএমএস সেবাঃ মোবাইলের মেসেজ অপশনে –এ গিয়ে MRP<SPACE>EID NO লিখে 6969 নং এ send করে পাসপোর্টের বর্তমান স্ট্যাটাস জানা যাবে।
অনলাইন সেবাঃ এছাড়া www.passport.gov.bd ঠিকানায় গিয়ে EID এবং জন্মতারিখ প্রদান করে পাসপোর্টের বর্তমান স্ট্যাটাস জানা যাবে।
পাসপোর্ট প্রস্তুত হলে বা আবেদনে কোন সমস্যা থাকলে সঙ্গে সঙ্গে মোবাইলে এসএমএস এর মাধ্যমে বার্তা পৌঁছে যাবে।
তবে অনেক ক্ষেত্রেই এই সেবা গুলো আপনাকে সঠিক তথ্য দিতে ব্যর্থ হতে পারে। পুলিশ ভেরিফিকেশনের ঝামেলার জন্যেই প্রধানত কাজ গুলোতে দেরি হয়ে থাকে। পাসপোর্ট এবং পুলিশ এই দুটি অধিদপ্তরের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কাজগুলো সম্পন্ন হয়ে থাকে। তাই কোন খোজ খবর না পেলে কিছুদিন ধৈর্য ধরে আপেক্ষা করুন। অথবা আপনার সংশ্লিষ্ট থানা বা পাসপোর্ট অফিসে খোজ নিতে পারেন।
পাসপোর্ট তৈরির ব্যাপারে যে সবাইকে বিশারদ হতে হবে এরকম কোন কথা নেই। কিন্তু বাংলাদেশ পাসপোর্ট ফর্ম পূরণ সহ পুরো প্রক্রিয়াটি নির্ভুল ভাবে শেষ করতে হবে, তাছাড়া আপনি কোথাও না কোথাও আটকে যাবেন। তখন হয়তো আবার পুরো প্রক্রিয়াটি প্রথম থেকে আবার শুরু করতে হবে। অনেকেই আছেন যারা বাংলাদেশ পাসপোর্ট ফর্ম পূরণ করতে পারেন না। অনেকেই আছে যারা বুঝতে পারবেন না সত্যায়ন বা প্রত্যায়নের বিষয়গুলো। আবার হয়তো দেখা গেল যে খুব কম সময় নিয়ে গেছেন আঞ্চলিক অফিসে, গিয়ে দেখলেন যে অনেক দেরি হয়ে যাবে বা ঝামেলা হবে। এসব ক্ষেত্রে দেখবেন যে পাসপোর্ট অফিসেই অনেক লোকজন ঘোরাফেরা করে ‘’সাহায্য’’ করার জন্যে। খাঁটি বাংলায় এদেরকে ‘দালাল’ বলা হয়ে থাকে। এরা যে সব সময় খারাপ হয় তা না। বাস্তব ক্ষেত্রে এরা ইচ্ছা করলে আপনার অনেক কাজই ঝামেলাহিন ভাবে করে দিতে পারবে। তার বিনিময়ে এদের কিছু টাকা দিলেই হবে। তাই যদি মনে করেন যে নিজে নিজে কাজ করতে গেলে ভুল হলেও হতে পারে, তাহলে এদের সাহায্য নিতে পারেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এদের সাথে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তাদের ভাল যোগ সাজস থাকে। দেখা যাবে যে একই জিনিস আপনি জমা দিতে গেলে অনেক সময় লাগবে বা এমনকি রিজেক্টও হয়ে যেতে পারে। সেই জিনিসই এদের মাধ্যমে জমা দিলে দেখা যাবে যে খুব দ্রুত এবং সহজেই কাজ সমাধান হয়ে যাচ্ছে। ব্যাপারটা একটু অনৈতিক হলেও বাস্তব ক্ষেত্রে কাজে দেয়। তবে অবশ্যই কাজ শুরুর আগে কাজের পরিমান অনুযায়ী টাকা মিটায়ে নিবেন। আর ফর্ম পূরণ করার সময় আপনি নিজে পিতা, মাতা, গ্রাম বা জেলার নাম গুলো ইংরেজি বানান সহকারে বলে দিবেন, কারন এরাও মানুষ এদের ভুল হতে পারে। সব মিলায়ে যদি সাবধানতার সাথে উপযুক্ত পদ্ধতিতে কাজ করেন, তাহলে শূন্য থেকে শুরু করে সব কাজ শেষ করে করে একদিনেই টোকেন নিয়ে বাসায় ফিরে আসতে পারবেন। তবে দালালদের দিয়ে কাজ করার আগে অবশ্যই তাকে ভালভাবে যাচাই করে নিবেন। এদের মধ্যে অনেকেই অদক্ষ বা অসৎও হতে পারে।
পরিশেষে আপনার বাংলাদেশ পাসপোর্ট নিরাপদ, নির্ভুল এবং দ্রুততার সাথে সম্পন্ন হোক এই কামনা করছি।
অনলাইনে কিভাবে বিমান টিকিট করবেন সে বিষয়ে আমাদের এই টিউটোরিয়ালটি দেখে নিতে পারেন
সূত্র:flightexpert
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।