
তথ্য-উপাত্ত বলছে, বাংলাদেশ দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় কাতার ও ওমান থেকে এলএনজি আমদানি করে। কাতারের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ১৫ বছর এবং ওমানের প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে ১০ বছর মেয়াদে এলএনজি আমদানির চুক্তি রয়েছে বাংলাদেশের। দীর্ঘমেয়াদি এই চুক্তির আওতায় কাতার থেকেই সবচেয়ে বেশি এলএনজি আমদানি করে পেট্রোবাংলা, যা দেশে গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় বড় ভূমিকা রাখছে।
এলএনজি আমদানির বিষয়টি দেখভাল করে পেট্রোবাংলা। সংস্থাটির সাবসিডিয়ারি রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কম্পানি লিমিটেডের (আরপিজিসিএল) তথ্য অনুযায়ী, কাতার গ্যাসের কাছ থেকে চলতি অর্থবছরে মোট ৪০ কার্গো এলএনজি আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। এরই মধ্যে এপ্রিল পর্যন্ত ৩৪ কার্গো দেশে এসেছে। সংশ্লিষ্ট কার্গো আমদানির মাধ্যমে কাতার থেকে দুই হাজার ৯৩ মিলিয়ন টন এলএনজি দেশে এসেছে।
এ বিষয়ে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কম্পানি লিমিটেডের (আরপিজিসিএল) প্রকৌশলী মো. রাশেদুল হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় ওমান ও কাতার থেকে এলএনজি আমদানি করা হয়। পাশাপাশি টেন্ডারের মাধ্যমে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। কাতার থেকে প্রতি মাসে চার কার্গো এলএনজি আসে, সেটা সরবরাহ নিয়ে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। কারণ, কাতারের হরমুজ প্রণালি ব্যবহার ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই। তবে ওমান হরমুজ প্রণালির বাইরে থাকায় এখান থেকে এলএনজি আমদানির সমস্যা হবে না। আমরা আপাতত কাতারের এলএনজি সরবরাহের বিষয়টি নিয়ে চিন্তায় আছি।’
কাতার থেকে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় ২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে দেশে এলএনজি আমদানি করছে পেট্রোবাংলা। এ পর্যন্ত এলএনজি আমদানি করা হয়েছে মোট ২৬৭ কার্গো। আগামী বছর থেকে কাতারের এলএনজি আরো আমদানির জন্য দ্বিতীয় দফায় চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। ফলে আগামীতে গ্যাস সরবরাহে নির্ভরযোগ্য হিসেবে কাতারকেই বিবেচনা করা হচ্ছে। ইরান-ইসরায়েল চলমান সংঘাত দীর্ঘায়িত হলে দেশের গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় বেশ প্রভাব পড়বে।
পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, বর্তমানে দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা চার হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। গতকাল সোমবার মোট দুই হাজার ৮৭১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়। তার মধ্যে এলএনজি সরবরাহ করা হয় এক হাজার ২০ মিলিয়ন ঘনফুট। দৈনিক ঘাটতি থাকছে এক হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি। এলএনজি আমদানি ব্যাহত হলে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে শিল্প-কারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র, সিএনজি স্টেশন ও আবাসিকে।
পেট্রোবাংলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে আসা এলএনজির প্রায় পুরোটাই আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। এর মধ্যে বেশির ভাগ আসে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায়। তাই চাইলেই বিকল্প উৎস তৈরি করা সম্ভব নয়। এ ছাড়া দাম কিছুটা বাড়লেও খোলাবাজার থেকে এলএনজি কেনা হচ্ছে পরিকল্পনা অনুসারে। সংঘাত দীর্ঘ হলে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে যাবে। হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে এলএনজি সরবরাহ ধরে রাখা কঠিন হবে।