দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমান শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
দুদকের আইনজীবী কাজী সানোয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ক্রোকের আদেশ দেওয়া সম্পত্তির মধ্যে প্রদীপের স্ত্রী নামে নগরের পাথরঘাটা এলাকার দুই ইউনিটবিশিষ্ট একটি ছয়তলা বাড়ি, নগরের মুরাদপুর এলাকার সেমিপাকা বাড়ি, কক্সবাজারে ফ্ল্যাট, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কার একটি করে এবং ১৭ লাখ ৭৩ হাজার টাকা থাকা বেসিক ব্যাংক নগরের আসাদগঞ্জ শাখার একটি হিসাব।
প্রদীপ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদক চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন আদালতে করা আবেদনে উল্লেখ করেন, আসামিরা সম্পত্তিগুলো হস্তান্তর ও স্থানান্তরের চেষ্টা করছেন বলে দুদক জানতে পেরেছে। এ জন্য এগুলো যাতে বিক্রি করা না যায় কিংবা হস্তান্তর মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ক্রোকের নির্দেশ দেওয়া হোক।
গত ২৩ আগস্ট দুদক চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে প্রদীপ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। এজাহারে বলা হয়, প্রদীপের বাবা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) এর একজন নিরাপত্তাপ্রহরী ছিলেন। ১৯৯৫ সালে উপপরিদর্শক (এসআই) পদে যোগদান করেন প্রদীপ। ২০০২ সাল থেকে তাঁর সম্পদগুলো দৃশ্যমান হতে থাকে। নানা কারণে হতে থাকেন আলোচিত।
দুদক সূত্র জানায়, নগরের পাথরঘাটা এলাকায় চুমকি তার বাবার কাছ থেকে একটি ছয়তলা বাড়ি দানপত্র মূলে পেয়েছেন বলে সম্পদ বিবরণীতে জমা দেন। কিন্তু চুমকির দুই ভাই ও আরেক বোন বাবার কাছ থেকে কোনো বাড়ি পাননি। তারা স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন। এতে বোঝা যায়, প্রদীপ ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে ওই বাড়ি করেছেন। কাগজপত্রে তার শ্বশুরের নামে রাখেন। পরে শ্বশুর থেকে দানপত্রমূলে নিবন্ধন করে নেন ২০১৩ সালে। ওসি প্রদীপের সব সম্পত্তিই তার স্ত্রী চুমকির নামে। তার কোনো বিশ্বাসযোগ্য জ্ঞাত আয়ের উৎসই নেই। চুমকির নামে ৪ কোটি ৪৪ লাখ ১৮ হাজার ৮৬৯ টাকার সম্পদ থাকার প্রমাণ পেয়েছে দুদক।
এর মধ্যে তিনি পারিবারিক ব্যয়সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে খরচ করেছেন ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। চুমকির আগের সঞ্চয়, উপহার ও বাড়িভাড়া থেকে বৈধ আয় হিসেবে ৪৯ লাখ ১৩ হাজার ২৩৪ টাকার সম্পদ পাওয়া যায়। বৈধ আয় বাদ দিলে চুমকি নামে মোট ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকার অবৈধ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ পাওয়া যায়। এটা তার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে সম্পদ ক্রয় করে স্ত্রীর নামে রেখেছেন বলে দুদক অনুসন্ধানে তথ্য পেয়েছে।
গত ৩১ জুলাই টেকনাফের বাহারছড়া তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এই ঘটনায় নিহতের বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে কক্সবাজারের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রদীপসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এরপর অসুস্থতার কথা বলে থানা থেকে ছুটি নিয়ে চলে আসেন প্রদীপ। চট্টগ্রামে থাকেন আত্মগোপনে। সেখান থেকে ৬ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। এরপর থেকে কারাগারে আছেন। প্রদীপের স্ত্রী চুমকি পলাতক রয়েছেন।
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।