চলমান তীব্র দাবদাহে নারায়ণগঞ্জে ডায়রিয়া ও জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এখানে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, চিকিত্সা নিতে আসা বেশির ভাগ রোগীই ডায়রিয়া আক্রান্ত। সাধারণ সময়ে এসব হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি থাকে ১০ থেকে ১৫ জন। তবে বর্তমানে হাসপাতালগুলোতে দৈনিক শতাধিক ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। সর্বশেষ তথ্যমতে গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর পর্যন্ত এ রোগীর সংখ্যা প্রায় অর্ধশতাধিক। চিকিৎসকরা বলছেন, কদিন ধরেই অতিরিক্ত গরমের কারণে পানির চাহিদা বেড়ে গেছে। অনিরাপদ পানি ও খাবার গ্রহণের কারণে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ছে।
নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে পাঁচ বছর বয়সী শিশু মো. রহমানকে নিয়ে এসেছেন বাবা কামাল হোসেন। তিনি জানান, ছেলের হঠাৎ করে পাতলা পায়খানা শুরু হয়; সঙ্গে জ্বরও আসে। স্থানীয় ফার্মেসি থেকে ওষুধ খাইয়েছি। কিন্তু কোনো পরিবর্তন না হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে এখানে নিয়ে এসেছি। এখন তার ছেলে আগের চেয়ে ভালো আছে বলে জানান। রহমানের মতো আরও অনেক শিশু ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। তবে, এসব হাসপাতালে শিশুর তুলনায় পূর্ণবয়স্ক রোগীর সংখ্যা বেশি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, বর্তমানে যে পরিমাণ রোগী ভর্তি আছে, ঈদের ছুটি শেষে ঘরমুখো সব মানুষ ফিরলে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তবে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতির কথাও জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়রিয়া পানিবাহিত রোগ। দূষিত পানি পান করার মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। সাধারণত দিনে তিন বা এর চেয়ে বেশিবার পাতলা পায়খানা হতে শুরু করলে তার ডায়রিয়া হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়। গরম এলেই ডায়রিয়া সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করে। বিশেষ করে, শিশু-কিশোর ও বয়স্করাই এ রোগে বেশি ভোগে। তাদের মতে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শহরে ট্যাপের পানি সেপটিক ট্যাংক বা স্যুয়ারেজ লাইনের সংস্পর্শে দূষিত হয়ে পড়ে। অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন জীবনযাপন, যেখানে-সেখানে ও পানির উৎসর কাছে মলত্যাগ, সঠিক উপায়ে হাত না ধোয়া, অপরিচ্ছন্ন উপায়ে খাদ্য সংরক্ষণ এবং দোকান, রেস্তোরাঁ বা বাসায় বাসি খাবার গ্রহণ ডায়রিয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।
এদিকে নারায়ণগঞ্জের তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এপ্রিল মাস জুড়েই থাকবে তাপপ্রবাহ। এ সময় ৪২ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা পৌঁছাতে পারে। নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সেবিকা জানান, আমাদের এই হাসপাতালে অনেকেই ঈদ ছুটি কাটাচ্ছে ভাগ ভাগ করে, তাই আমাদের সেবিকাদের সংখ্যা রোগীর তুলনায় কিছুটা কম। প্রতিদিন রোগী বাড়ছে, চাপও বাড়ছে। পেটে ব্যথা ও বমিসহ বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হচ্ছে বেশির ভাগ রোগী। প্রাথমিক চিকিৎসায় আমরা স্যালাইন ও ইনজেকশন দিচ্ছি।
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মুহম্মদ মুশিউর রহমান বলেন, তীব্র তাপপ্রবাহে নারায়ণগঞ্জের হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া রোগী কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে আশঙ্কাজনক না। আমরা লোকজনদের সতর্ক করছি, আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি আছে, ওষুধ আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। সাধারণ মানুষের কাছে অনুরোধ থাকবে, আপনারা বাহিরের খোলামেলা খাবারগুলো বর্জন করুন। অন্যান্য বারের তুলনায় এবার নারায়ণগঞ্জে ডায়রিয়া আক্রান্ত অনেক কম। এবার যারা তুলনামূলক বয়স্ক, তারাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। শিশুদের ক্ষেত্রেও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি আছে। হাসপাতালে শিশুদের স্যালাইন-সংকট আছে কিছুটা।
তিনি আরও বলেন, আপনারা কেউ বাহিরের খাবার খাবেন না। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খাবেন। আর যদি পাতলা পায়খানা হয়, তাহলে প্রথমেই বাসায় ওরস্যালাইন খাবেন। আর বেশি সমস্যা লাগলে অবশ্যই নিকটবর্তী হাসপাতালে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন, ঢিলেঢালা পোশাক পরবেন। ফ্রিজে রাখা খাবার খাবেন না। ফলমূল খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই ভালোভাবে ধুয়ে খেতে হবে।
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।