জাতিসংঘের স্থায়ী ফোরামের ২৩তম অধিবেশনে ঐতিহাসিক ‘পার্বত্য শান্তিচুক্তি’ বাস্তবায়ন এবং ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের উন্নয়নে সরকারের গৃহীত কার্যক্রম তুলে ধরেছে বাংলাদেশ। নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদর দপ্তরে চলমান আদিবাসী বিষয়ক অধিবেশনে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মশিউর রহমান।
স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) জাতিসংঘের স্থায়ী ফোরামের ২৩তম অধিবেশনে তিনি এসব কথা তুলে ধরেন।
এ বিষয়ে মো. মশিউর রহমান তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান দেশের জনগণের মধ্যে ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারীপুরুষভেদ বা জন্মস্থান নির্বিশেষে সম অধিকার প্রদান করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে ১৯৯৭ সালে ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে কয়েক দশকের সংঘাতের অবসান ঘটেছে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জনগণকে এদেশের উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করা সম্ভব হয়েছে।
চুক্তি বাস্তবায়ন সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এর ধারাগুলো বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। মোট ৭২টি ধারার মধ্যে ইতোমধ্যে ৬৫টি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হয়েছে, ৩টি আংশিকভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে এবং ৪টি ধারা বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।
এছাড়াও তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা, ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ডিজিটাল ভূমি জরিপ ও ব্যবস্থাপনা উদ্যোগসহ অত্র অঞ্চলের সামগ্রিক উন্নয়ন সাধনে সরকারের গৃহীত নানা পদক্ষেপ সম্পর্কে ফোরামকে অবহিত করেন।
তিনটি পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলায় তিনজন প্রথাগত সার্কেল চিফ নানাবিধ প্রশাসনিক ও আইনি কর্তৃত্ব ভোগ করেন এবং প্রতিটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী থেকে নির্বাচিত হন বলেও উল্লেখ করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সচিব।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সঙ্গে পরামর্শ করে সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে। জাতিসংঘের বেশ কয়েকটি সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী এই অঞ্চলে উন্নয়ন কার্যক্রমের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
তিনি উল্লেখ করেন স্পষ্টতই পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির পর থেকে এই অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নে অসামান্য পরিবর্তন ঘটেছে।
সরকার আইন প্রণয়ন করে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সংস্কৃতি, ভাষা ও ঐতিহ্য, রক্ষা ও প্রচারের জন্য বিশেষায়িত সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছে। পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের মাঝে তাদের নিজ নিজ ভাষায় বিনামূল্যে পাঠ্য পুস্তক নিয়মিতভাবে বিতরণ করা হচ্ছে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর সরকারি চাকরি এবং সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য ৫ শতাংশ হারে কোটা সংরক্ষিত আছে। বর্তমানে, জাতীয় সংসদে চারজন এবং মন্ত্রিসভায় একজন ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর সদস্য রয়েছেন বলেও তিনি তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
জাতিসংঘ সদরদপ্তরে গত ১৫ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে আগামী ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত দুই সপ্তাহব্যাপী আদিবাসী সংক্রান্ত জাতিসংঘের স্থায়ী ফোরাম এর ২৩তম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এই সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব মো. মশিউর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করছেন। প্রতিনিধি দলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. খলিলুর রহমান এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারাম্যান সুপ্রদীপ চাকমাসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং স্থায়ী মিশনের প্রতিনিধিবৃন্দ রয়েছেন।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের আওতায় আদিবাসী সংক্রান্ত স্থায়ী ফোরাম বিশ্বব্যাপী আদিবাসীদের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কাজ করে থাকে।