দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজার অধিকাংশ মানুষ। জাতিসংঘ তাদের প্রতিবেদনে এ মন্তব্য করেছে। শুক্রবার স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো এ খবর প্রকাশ করেছে। ‘ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন’ (আইপিসি) দ্বারা জাতিসংঘ-সমর্থিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গাজার সব মানুষ একটি খাদ্য সংকটের সম্মুখীন। সেখানে পাঁচ লাখ ৭৬ হাজার ৬০০ মানুষ অনাহারের স্তরে রয়েছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি-সহ জাতিসংঘের অন্যান্য সংস্থা ও বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) তথ্যের ভিত্তিতে এই রিপোর্ট তৈরি করেছে আইপিসি। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি
গত ২৪ নভেম্বর থেকে ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে গাজা উপত্যকার মোট জনসংখ্যার ৯০ শতাংশের বেশি (প্রায় ২০ লাখ ৮০ হাজার মানুষ) উচ্চমাত্রার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হয়েছে বলে মনে করছে সংস্থাটি। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিওরিটি ফেস ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকার ২৩ লাখ মানুষ এখনই খাদ্যাভাবে ভুগছেন। এমন পরিস্থিতি যদি চলতে থাকে তাহলে অদূর ভবিষ্যতে সেখানে প্রবল খাদ্য সংকট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে।
জাতিসংঘ একটি নির্দিষ্ট তারিখ জানিয়ে দিয়েছে তাদের রিপোর্টে। বলা হয়েছে, ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে গাজায় পরিমাণমতো খাদ্যদ্রব্য পাঠাতে না পারলে খাদ্য সংকট তৈরি হবে। ক্ষুধা সূচকের স্কেলে পাঁচটি ধাপ আছে। ৭ ফেব্রুয়ারি তা সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছাবে। আইপিসি জানিয়েছে, এত পরিমাণ মানুষ এমন খাদ্য সংকটে এর আগে কখনো পড়েনি। তাদের বক্তব্য, অপুষ্টির সমস্যা প্রবলভাবে দেখা যাচ্ছে গাজায়। এই পরিস্থিতি এগোতে দিলে তবেই খাদ্য সংকট তৈরি হবে।
গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে গাজার শাসক গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধাদের নজিরবিহীন হামলার প্রতিশোধ নিতে ফিলিস্তিনি ছিটমহলটিতে নির্মম সামরিক অভিযান শুরু করে তেল আবিব। তাদের অবিরাম বিমান হামলা ও স্থল আক্রমণে গাজার বিস্তৃত এলাকা ধুলায় মিশে গেছে। টানা আড়াই মাস ধরে চলা ইসরাইলি হামলায় গাজায় ২০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত ও ৮০ শতাংশের বেশি বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছে।
গাজা অবরুদ্ধ করে রেখে সেখানে খাবার, পানি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে রেখেছে ইসরাইল। পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে পড়ার মুখে রাফাহ ক্রসিং দিয়ে মিশর থেকে গাজায় ট্রাকযোগে কিছু ত্রাণ পাঠানো শুরু হয়েছে। এসব ট্রাকে করে খাবার, পানি ও ওষুধ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু জাতিসংঘ বলছে, যে পরিমাণ খাবার নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা গাজার বাসিন্দাদের প্রয়োজনের মাত্র ১০ শতাংশ পূরণ করতে পারবে, যাদের অধিকাংশই বাস্তুচ্যুত।
আইপিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সেখানে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি আছে, আর তা দিন দিন বাড়ছে। তীব্র শত্রুতা ও মানবিক ত্রাণ প্রবেশে বিধিনিষেধ বজায় থাকায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। ইসরাইলের লাগাতার হামলা, তাদের দাবি মতো ত্রাণ যাচাই করার সুযোগ দেওয়া, টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ রাখা ও জ্বালানি সংকটের কারণে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। অপ্রতুল সরবরাহের মধ্যে গাজার কিছু বেপরোয়া বাসিন্দা ত্রাণ ট্রাকগুলোতে ঝাঁপিয়ে পড়ে খাবার ও অন্যান্য পণ্য ছিনিয়ে নেওয়া চেষ্টা করেছেন। গাজার বাসিন্দারা গাধা জবাই করে সেগুলোর মাংস খাচ্ছেন ও ক্ষীণ হয়ে পড়া রোগীরা চিকিৎসা সহায়তা চাইছেন।
জাতিসংঘ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির প্রধান অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা পরিচালক আরিফ হুসেইন গাজার সংকটকে ‘নজিরবিহীন’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এই প্রতিবেদনটি আমাদের সবচেয়ে খারাপ শঙ্কাকেই নিশ্চিত করেছে।’ তিনি বলেছেন, ‘গত ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমি এ কাজ করছি। আমি আফগানিস্তানে গেছি, ইয়েমেনে গেছি, সিরিয়ায়, দক্ষিণ সুদানে, ইথিওপিয়ায়, নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলেও। কিন্তু কোথাও পরিস্থিতি এত দ্রুত খারাপ হতে দেখিনি।’
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।