বাজেটে বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরৎ আনার যে সুযোগ দেয়া হয়েছে তার বিরোধীতা করেছেন সংসদ সদস্যরা। রবিবার (১২ জুন) জাতীয় সংসদে আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি ও বিরোধী দলের বলতে গেলে সকল এমপি এর বিরোধিতা করেন।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়।
প্রস্তাবিত বাজেটে বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরাতে সরকার যে উদ্যোগ রেখেছে তার কঠোর সমালোচনা করেছেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান। তিনি বলেন, বাজেটে অর্থ পাচারকারীদের দায়মুক্তির যে সুযোগ রাখা হয়েছে, এই সুযোগ থাকলে এই অর্থ চোরেরা হয়ে যাবে শ্রেষ্ঠ করদাতা।
পীর ফজলুর রহমান বলেন, অর্থমন্ত্রী বাজেটে যে দায়মুক্তি নিয়ে আসছেন, বিদেশে টাকা পাচার করা অর্থ দেশে নিয়ে আসলে দায়মুক্তি দেয়া হবে। এটি আমি সমর্থন করি না। যারা অর্থ পাচার করেছে যারা অবৈধভাবে অর্থ আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক, না হলে মানি লন্ডারিং আইনের কোন দরকার নেই দেশে।
তিনি বলেন, অনেকে সন্দেহ করছেন, যদি বিদেশে অর্থ পাচার করে ট্যাক্স দিয়ে সেটাকে আবার বৈধ করা যায়, তাহলে আরো বিশাল একটি গোষ্ঠী হয়তো যারা সেই টাকা বিদেশে পাচার করে বৈধভাবে দেশে আনার জন্য বসে আছেন। যারা অবৈধভাবে টাকা অর্জন করেছেন লুটপাটের মাধ্যমে তারা সেই টাকা বৈধ করার জন্য বসে আছেন। এ ক্ষেত্রে দায়মুক্তি দিলে মানুষ উৎসাহিত হবে অবৈধ টাকা রোজগারের জন্য। যেখানে সাধারণ মানুষ দিনরাত পরিশ্রম করছেন স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য, সেখানে কিছু মানুষ অবৈধভাবে লুটপাট করবে আর সেই টাকা বিদেশে পাঠাবে। পরে আবার সেই টাকা বিদেশ থেকে নিয়ে এসে সামান্য একটা ট্যাক্স দিয়ে বৈধ করে নেবে। পরে দেখা যাবে শ্রেষ্ঠ করদাতা পুরস্কার পেয়ে যাবেন এই অর্থ চোরেরা।
জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, দেশে এখনও নানা ধরনের বৈষম্য বিরাজ করছে। এখনো কপি রাইটাররা পর্যাপ্ত অর্থ পায় না। বিসিএস পাশ করেও গত ৩৫তম বিসিএসে ৩৪ জন, ৩৬তম বিসিএসে ৩৭ জন এবং ৩৭তম বিসিএসে সব বিষয়ে পাশ করেও কোন এক অদৃশ্য রিপোর্টের কারণে চাকরি পাননি। তিনি এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে বিদেশ থেকে আনা অর্থ সাদা করার যে সুযোগ তাতে দুর্নীতি বাড়বে এবং এটি অনৈতিক বলে এ বিষয়টির পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপির রুমিন ফারহানা বলেছেন, দেশে দরিদ্রের হার কমেছে বলে সরকার যে আত্মতৃপ্তিতে ভুগছে তার প্রমাণ পাওয়া যায় টিসিবির গাড়ির পিছনের লাইন দেখলে। সেখানে ক্যান্সারের রোগী থেকে ৫ বছরের শিশুও লাইনে দাড়িয়ে দিন পার করে পণ্য না পেয়ে ফিরতে বাধ্য হচ্ছে।
তিনি বলেন, দেশে ধনী দরিদ্রের ব্যবধান বাড়ছে। দেশে চিকিৎসা ব্যয় এমনভাবে বাড়ছে যে কোন পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে সে সংসারের দুর্যোগ নেমে আসে। তিনি বলেন, ২৭ মন্ত্রণালয়ের সম্পূরক বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। যা এডিবির ৫৮ শতাংশ। তা ছাড়া সবচেযে গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় তার বরাদ্দের ৪১ শতাংশ ১১ মাসে ব্যয় করতে পারে নি।
তিনি বলেন, দেশে বেসরকারি ক্লিনিকের সংখ্যা যা রেজিস্ট্রারকৃত তা হলো প্রায় ১২০০০, কিন্তু তার কয়েকগুণ বেশি অবৈধ ক্লিনিক রয়েছে। সে দিকে কারো নজর নেই, তারা রোগীদের নিঃস্ব করে দিচ্ছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সমালোচনা করে রুমিন বলেন, এ মন্ত্রণালয় সব চেয়ে আশ্চর্যজনকভাবে দ্রব্যমূল্য বিশেষ করে ভোজ্য তেলের দাম আকাশ ছোঁয়া। কয়েকজন তেলমিল মালিক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মিলে একটা সিন্ডিকেট তৈরি করে ভোজ্যতেলেই শুধু ১ হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে। এ লুটপাটের অর্থ কতদূর পর্যন্ত ভাগবাটোয়ারা হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
সরকারী দলের সদস্য ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, আমরা স্বাস্থ্য বিমা করতে পারি। তিনি ক্লিনিকের লাইসেন্স মাছ ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সবাই যাতে না পায়, যাতে স্বাস্থ্য সেবা নষ্ট না হয় তা দেখার আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রাণ গোপাল দত্ত বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার সুযোগ দেয়াকে এক ধরনের দুর্নীতি বলে মন্তব্য করে এটা বন্ধ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, যারা অবৈধভাবে বিদেশে টাকা পাচার করে তারা ভালো মানুষ নয়।
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।