প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস একটি এমডি পদের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনকে দিয়ে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ করিয়েছিলেন।
তিনি ভেবেছিলেন আমরা আত্মসমর্পণ করব। একটা কথা মনে রাখবেন, আমি শেখ মুজিবের মেয়ে। অন্যায়ের কাছে মাথানত করি না।
বুধবার একাদশ জাতীয় সংসদের অষ্টাদশ অধিবেশনে ‘প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে’ আনীত সাধারণ প্রস্তাব আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা জানেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে জাপান সফরে যান। তখন কিন্তু পদ্মা সেতু, যমুনা সেতু সবগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। উত্তরবঙ্গে সব সময় দুর্ভিক্ষ লেগে থাকায় ওই সময় বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর ওপরই গুরুত্ব দিয়েছিলেন। যমুনা সেতু তখন জাপান সরকারের প্রচেষ্টায় ফিজিবিলিটি স্টাডি হয়। সেই সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেন। পরবর্তীতে জিয়া ক্ষমতায় এসে সেটি বন্ধ করে দেন। এরশাদ ক্ষমতায় আসার পর উদ্যোগ নেন এবং ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করেন। কিন্তু ডিজাইন সবগুলো তখনো সম্পন্ন হয়নি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর এই যমুনা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করি এবং সম্পন্ন করি। তখনো যমুনা সেতুর সঙ্গে কিন্তু রেললাইন ছিলো না। ছিলো না বিদ্যুৎ কিংবা গ্যাস লাইনও। এগুলো সব করে ওই সেতুটি নির্মাণ করি। তখন ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বলেছিলো রেল লাইন দিয়ে এই সেতু লাভজনক হবে না। আর আমার কথা ছিলো, এটা লাভজনক হবে। এতই লাভজনক হয়েছে যে এখন তারা উল্টো টাকা দিচ্ছে আলাদাভাবে রেল লাইন করতে। এটা হচ্ছে তাদের বিবেচনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি ৯৬ সালে সরকার গঠনের পর যখন জাপানে যাই, তখন তাদের বলেছিলাম যে আমার বাবা এসেছিলেন আপনারা যমুনা সেতু দিয়েছিলেন। আমি পদ্মা সেতু এবং রূপসা সেতু- এই দুইটা চাই। আমি জানি পদ্মা অত্যন্ত খরস্রোতা নদী। এটার ফিজিবিলিটি স্টাডি করতে অনেক সময় লাগবে। তাই রূপসা আগে করতে বলি। সেটা আমরা করে ফেলেছি। আর পদ্মার ফিজিবিলিটি স্টাডি হয়। পরে তারা যে পয়েন্টটি ঠিক করে, আমরা তখন শুধু একটা রোড ব্রিজ করে প্রকল্প তৈরি করে সেটার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি। ২০০১ সালের ৪ জুলাই ওখানে আমরা ভিত্তিপ্রস্তর দেই।
সরকার প্রধান বলেন, ২০০১ সালের অক্টোবরে বিএনপি ক্ষমতায় এসে সেই প্রকল্প বাতিল করে দেয়। তারা বলেছে, এখানে হবে না তারা আরিচায় করবে। সেতুর কাজ বন্ধ করে দিল। যাক একদিকে ভালোই, আমরা দ্বিতীয়বার সরকারে আসার পর আবার উদ্যোগ নেই। এর মাঝে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আবার একটা উদ্যোগ নিয়েছিল, যেটা কিছুক্ষণ আগে একজন মাননীয় সংসদ সদস্য বলেছেন। মাত্র ১০ হাজার কোটি টাকায়। কিন্তু সেই সেতুর সঙ্গে রেল ছিল না, বিদ্যুৎ ছিল না। গ্যাসের লাইনও ছিল না। সেই সেতু মাত্র ৫ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ করেছিল।
পরে আমরা যখন ক্ষমতায় আসলাম ২০০৯ সালে। আমাদের কথা ছিলো, এই সেতুটি যখন করব, তখন রেল, সড়ক, তার সঙ্গে গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং এমনকি ওয়াইফাই কানেকশন অর্থাৎ ডিজিটাল কানেকশনটাও হবে। এসব কিছু মিলেই কিন্তু আমরা সেতুর প্রকল্প নেই।
পদ্মা সেতু আমাদের আত্মবিশ্বাস তৈরি করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, টেকনোলজি সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও উন্নত কাজ করতে পারব। বাংলাদেশ যে নিজেরা পারে এই ধারণাটা সারা বিশ্বে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে।
এসময় ড. ইউনূসের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি ড. ইউনূস বেআইনিভাবে ৭১ বছর পর্যন্ত এমডি পদে ছিলেন। তাকে কোনো অপমান করা হয়নি। বরং তাকে ব্যাংকের উপদেষ্টা এমেরিটাস হওয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু তাকে এমডি থাকতে হবে।
১৯৯৮ সালের বন্যার সময় গ্রামীণ ব্যাংককে আমরা ৪০০ কোটি টাকা দিয়েছিলাম। গ্রামীণ ফোনের লাভের টাকা ব্যাংকে যাওয়ার শর্ত ছিলো। কিন্তু তিনি তার একটি টাকাও ব্যাংককে দেননি। বরং গ্রামীণ ব্যাংকের যত টাকা, সব নিজে খেয়ে গেছেন। তা নাহলে একজন ব্যাংকের এমডি এত টাকার মালিক হয় কীভাবে? দেশে-বিদেশে এত বিনিয়োগ করে কীভাবে? ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে লাখ লাখ ডলার কীভাবে অনুদান দেয়? কার টাকা দিলেন? কীভাবে দিলেন- সেটা তো কেউ খোঁজ নিলো না।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে বলা হলো। আমি, আমার বোন রেহানা, আমার ছেলে কেউ বাদ যায়নি। ড. মসিউর রহমান, আমাদের সচিব মোশাররফ, মন্ত্রী আবুল হোসেন এদের ওপর যে জুলুম তারা করেছে এবং যখন অসত্য অপবাদ দিয়ে যখন পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দিলো, তখন আমরা বললাম আমরা নিজের টাকায় করব। অনেকে বোধহয় ভেবেছিলেন এটা অস্বাভাবিক। কিন্তু আমি বলেছিলাম আমরা করতে পারব। এই আত্মবিশ্বাস আমার ছিলো।
সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশের পর ইউনূস বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করলেন। কিন্তু প্রত্যেকটি মামলায় হেরে গেলেন। কারণ আইন তো তাকে কাভার দিতে পারে না। আইন তো কারো বয়স কমাতে পারে না। হেরে গিয়ে আরও ক্ষেপে গেলেন। হিলারি ক্লিনটনকে দিয়ে আমাকে ফোন করিয়েছেন। টনি ব্লেয়ারের স্ত্রী শেরি ব্লেয়ারকে দিয়ে ফোন করিয়েছেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের প্রতিনিধি আসলেন, সবার কথা ইউনূসকে ব্যাংকের এমডি রাখতে হবে।
তিনি বলেন, জাতির কাছে প্রশ্ন করছি ব্যাংকের এমডির পদে কী মধু ছিল যে ওইটুকু উনার না হলে চলতো না। ইউনূস তো নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন। নোবেল প্রাইজ যে পায় সে একটি এমডি পদের জন্য এত লালায়িত কেন? সেটা সবার চিন্তা করে দেখা উচিত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক যেন টাকাটা বন্ধ করে সেজন্য বার বার ইমেইল পাঠানো- হিলারির সঙ্গে দেখা করা, তাকে দিয়ে ইমেইল পাঠানো; এবং তার সঙ্গে আমাদের একজন সম্পাদকও ভালোভাবে জড়িত ছিলেন। আমার প্রশ্ন এদের মধ্যে কী কোনো দেশপ্রেম আছে?
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।