নির্দলীয় সরকারের অধীন আগামী নির্বাচন, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন এবং খালেদা জিয়ার পরিপূর্ণ মুক্তি দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। সমমনা দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে মাটি কামড়ে থাকতে চায় দলটি। এ লক্ষ্যে জোটভুক্ত দল এবং জোটের বাইরেও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সবাইকে একই প্লাটফরমে নিয়ে এসে বড় আন্দোলন গড়ে তুলতে চায় বিএনপি। এ জন্য শিগগিরই কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
সংক্রমণ কমে আসায় আজ থেকে করোনা মহামারিসংক্রান্ত বিধিনিষেধ উঠে যাচ্ছে। করোনার বিধিনিষেধ জারির পর থেকে বিএনপিসহ সরকারি ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি স্থগিত ছিল। আজ থেকে আবারও মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছে বিএনপি।
আন্দোলনের ধরন কেমন হবে এই প্রশ্নে বিএনপি নেতারা জানান, আপাতত তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে সারা দেশে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করা হবে। এসব কর্মসূচির একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে, যা আজ জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় চূড়ান্ত হবে। কর্মসূচি দু-একদিনের মধ্যে সংবাদ সম্মেলনে জানানোর কথা রয়েছে। অন্যদলগুলোও রাজপথে নামার জন্য কর্মসূচি চূড়ান্ত করছে।
দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপির হাইকমান্ড চাইছে— সরকারবিরোধী সব দলকে একটি প্ল্যাটফরমে নিয়ে আসতে। এ কারণে ২০-দলীয় জোট এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শীর্ষ নেতা মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে সম্প্রতি বিএনপির একজন শীর্ষস্থানীয় নেতার দীর্ঘ বৈঠক হয়েছে।
আন্দোলন ও ঐক্য গড়ার বিষয়ে রোববার রাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ২০ দলের শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়। এতে দুদলের মধ্যে দীর্ঘদিনের ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়। একই সঙ্গে আগামী দিনে একসঙ্গে পথ চলার বিষয়ে দুদলের নেতারাই অঙ্গীকার করেন।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের বাইরের রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ার কাজ শুরু করেছে বিএনপি। ইতোমধ্যে অন্তত ৩০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা শেষ। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের এক দফা দাবিতে আন্দোলন ইস্যুতে তারা এ ঐক্য গড়তে চায়।
শুক্রবারের মধ্যে আরও ২৫টি বিরোধী রাজনৈতিক দল ও বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে আলোচনার কথা রয়েছে। পরে সবার মতামত পর্যালোচনা শেষে রোববার ঐক্যের বিষয়ে দলগুলোর কাছে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব তুলে ধরার কথা রয়েছে। ওই দিন আলোচনাসভার মাধ্যমে তা তুলে ধরা হতে পারে। বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক এসব তথ্য জানিয়েছেন।
বিএনপির সঙ্গে ঐক্যের বিষয়ে গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, আন্দোলন ও বৃহত্তর ঐক্যের বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে কথা হয়েছে, কিন্তু আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়নি। বিএনপির যে কোনো প্রস্তাবের বিষয়ে আমরা পজিটিভ। সরকারকে সরিয়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের এক দফা দাবিতে আন্দোলনের বিষয়ে আমরাও একমত।
ঐক্যের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন এখন সবার দাবি। এ ইস্যুতে আমরা বৃহত্তর ঐক্য গড়তে চাই। ইতোমধ্যে অনেক দলের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আনুষ্ঠানিভাবে আমরা শিগগিরই সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করব। সবাইকে দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে একটা জায়গায় আসতে হবে।
বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, ‘বৃহত্তর ঐক্য’র বিষয়ে সভা-সেমিনারে নেতারা বিভিন্ন বক্তব্যে দিয়েছেন। কিন্তু এ ব্যাপারে বিরোধী দলগুলোর কাছে বিএনপি তার অবস্থান আনুষ্ঠানিকভাবে স্পষ্ট করতে চায়। এ জন্য রোববার দলের একটি কর্মসূচিকে বেছে নেওয়া হয়েছে। সেখানে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজনী তা তুলে ধরে ঐক্যের ডাক দেওয়া হতে পারে। সে লক্ষ্যে গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করছেন দলের শীর্ষ নেতারা। ওই দিন বৃহত্তর ঐক্যের একটি নমুনা কিংবা নিজেদের প্রস্তাবের খসড়া তুলে ধরতে চায়। সে ডাকে সাড়া দেওয়া দলগুলোর সঙ্গে পরে আনুষ্ঠানিকভাবে মতবিনিময় শুরু করবে বিএনপি।
বিএনপি নেতারা আরও জানান, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক অধ্যায়ের ৪ দশক পার হচ্ছে। ১৯৮২ সালের ১ জানুয়ারিতে রাজনীতিতে যুক্ত হন। এই ৪০ বছর পূর্তিকে সামনে রেখেও বিএনপি কিছু কর্মসূচি পালন করবে। যেখানে দলীয় চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক সংগ্রাম ও ইতিবাচক কাজগুলো তুলে ধরা হবে।
সূত্র:যুগান্তর
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।