মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার রায় আগামীকাল সোমবার ঘোষণা করা হবে। দীর্ঘ শুনানি, সাক্ষীদের জবানবন্দি, জেরা ও আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শেষে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাঈল এ রায় ঘোষণা করবেন।
হত্যার কয়েকদিন আগে থেকেই মূলত মেজর সিনহার সঙ্গে ওসি প্রদীপের মন কষাকষি শুরু হয়। তাইতো মেজর সিনহার কোনো কথাকেই সহ্য করতে পারেননি ওসি প্রদীপ। সেই জায়গা থেকেই এই হত্যাকাণ্ড বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। মেজর সিনহার রায়কে ঘিরে পেছনের অনেক কাহিনীই জানতে চান পাঠকরা। সেই ধারাবাহিকতায় এই মামলার অভিযোগপত্র ও বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মেজর সিনহাকে যে কারণে হত্যা করা হয় তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা তুলে ধরা হলো-
৩ জুলাই ২০২০। তিন সহযোগীসহ কক্সবাজার আসেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। কলাতলীতে ওয়াল্ড বিচ রিসোর্টে ওঠেন তারা। উদ্দেশ্য জাস্ট গো নামের ইউটিউব চ্যানেলের জন্য ভ্রমণ বিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করা।
চারদিন পর। ৭ জুলাই ২০২০। ঠিকানা বদল করে টিমটি। হিমছড়ির নিলীমা রিসোর্টের ডি-১ কটেজে ওঠেন তারা। শুরু হয় কক্সবাজারের মনোরম দৃশ্য এবং বৈচিত্রপূর্ণ জীবন ও জীবিকার তথ্য সংগ্রহ আর ভিডিও চিত্র ধারণ।
এক পর্যায়ে তারা যান টেকনাফে। এ সময় তারা মাদক নির্মূল অভিযানের নামে সাধারণ মানুষের ওপর ওসি প্রদীপ কুমার দাশের নিপীড়নের কথা জানতে পারেন। ভূক্তভোগী অনেক পরিবার সিনহা ও তার টিমের কাছে ওসি প্রদীপের অত্যাচার নিপীড়নের বর্ণনা দেয়। সিনহা ও তার লোকজন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী ও তাদের বাহিনীর নাম নানা তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করেন। এরইমধ্যে জুলাই মাসের কোন একদিন মেজর সিনহা, শিপ্রা দেবনাথ ও সাহেদুল ইসলাম রিফাতের সঙ্গে দেখা হয় ওসি প্রদীপের। তারা নানা অভিযোগ সম্পর্কে ওসি প্রদীপের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন।
ঘটনাটি হালকাভাবে নেন মেজর সিনহা। দলবল নিয়ে নিলীমা রিসোর্টে থেকে কাজ চালিয়ে যান। তবে, হুমকিতে কাজ না হওয়ায়, বিষয়টি বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের আইসি ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলীকে জানান ওসি প্রদীপ। থানার সোর্সদের সঙ্গে গোপনে কথা বলেন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে ওসি প্রদীপ ও ইন্সপেক্টর লিয়াকত তিন সোর্স মো. নুরুল আমিন, আইয়াছ উদ্দিন ও নিজাম উদ্দিনের সঙ্গে করণীয় ঠিক করতে মিটিং করেন।
তারা তথ্য সংগ্রহে নামে। ক্রসফায়ারে নিহত ব্যক্তি ও অন্যান্য ভিক্টিম পরিবারের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মেজর সিনহা ও তার টিম সম্পর্কে খোঁজ নেয় সাদা পোশাকের পুলিশ ও সোর্স। বলে আসে, এ ধরণের লোকজন আসলে পুলিশকে খবর দিতে।
জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহ। আইসি লিয়াকত আলী পুলিশের সোর্স নুরুল আমিন, নিজাম উদ্দিন ও মোহাম্মদ আইয়াছের সঙ্গে আবারও মিটিং এ বসেন। সিনহা ও তার ভিডিও দলকে খুঁজে বের করতে তাড়া দেন। বলেন, তা না হলে ওসি প্রদীপ লিয়াকতের বড় ধরণের ক্ষতি করবে। এরপর লিয়াকত মেজর সিনহাকে হত্যা করতে মরিয়া হয়ে উঠেন।