প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশের ব্যাপক উন্নয়নের পরও দেশে-বিদেশে অপপ্রচার চালাচ্ছে এমন লোকজনের বিরুদ্ধে দলের নেতা-কর্মীদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন,‘এতো উন্নয়নের পরও কিছু মানুষ বিদেশে ও দেশে বসে অপপ্রচার করছে। এদের বিরুদ্ধে সচেতন হতে হবে, অপপ্রচারের জবাব দিতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আজ বিকেলে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের সভাপতিত্বকালে দেয়া প্রারম্ভিক ভাষণে একথা বলেন।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের অপকর্মের কথাগুলো তাঁর দলের নেতা-কর্মীদের জনগণকে অন্তত স্মরণ করিয়ে দেয়া উচিত, তাদের অত্যাচারের কথা আবারো তুলে ধরা উচিত, কেননা দেশের মানুষ অতীত ভুলে যায়।
শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়নশীল দেশ কেন হলাম সেজন্যও দেশের কিছু মানুষ অপপ্রচার করে। এরা কারা, এদের উদ্দেশ্যটা কি?
প্রধানমন্ত্রী গোপন ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত তুলে ধরে বলেন, তথাকথিত বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর একটি অংশ মিটিং করছেন কি করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় না রাখা যায়, কারণ হয়তো এটাই যে, আওয়ামী লীগ দেশের উন্নয়ন করেছে।
তিনি বলেন, ‘জনগণের শক্তিই আওয়ামী লীগের শক্তি। আমরা জনগণের সেবায় পরিকল্পিতভাবে কাজ করে যাচ্ছি বলেই দেশের উন্নয়ন হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশে^ মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে পৌঁছে গেছে। আমরা জনগণের কল্যাণে কাজ করছি। উন্নয়নের ছোঁয়া গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। সকল শ্রেণী পেশার মানুষ উন্নয়নের ছোঁয়া পেয়েছে।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, বিএনপিকে কোন আশায় মানুষ ভোট দেবে? পলাতক আসামী যে দল চালায় তাদের কি আশায় ভোট দেবে, বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী তারেক রহমানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এরা দেশের গরীবের টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করেছে। বিদেশে বসে আরাম আয়েশে আছে। এই আয়ের উৎস কি?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতো গাড়ি-বাড়ি, ড্রাইভার, শান-শওকত কোথা থেকে আসে। বাংলাদেশের মানুষের টাকা লুট করেইতো তারা বিত্তশালী। নইলে জিয়াউর রহমান মারা যাবার পরতো দেখালো তার কাছে ভাঙ্গা স্যুটকেস আর ছেড়া গেঞ্জি ছাড়া কিছুই পাওয়া যায়নি। তিনি ইউটিউব চ্যানেলে তাদের সেই সময়কার ভিডিওগুলোও দেখার পরামর্শ দেন।
তিনি দেশের সুবিধাভোগী স্বার্থান্বেষী মহলের সমালোচনা করে বলেন, কিছু মানুষ আছে যারা হাজার অপরাধকারীকে অপরাধী হিসেবে দেখেনা। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বললেও তারা দুর্নীতির জন্য সাজাপ্রাপ্তদের পক্ষ নেয়, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কথা বললেও সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদের মদদতাতাদের বিরুদ্ধে কথা বলেনা। যারা হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে, এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে এদের জন্য তারা মায়াকান্না করে।
দেশে স¤্রতি সাম্পদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের অপচেষ্টাকারি চক্রকেও তদন্তে তাঁর সরকার চিহ্নিত করেছে উল্লেখ করে বিচারাধীন বিষয় হওয়ায় এ বিষয়ে আর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।
‘খালেদা জিয়ার টার্গেট সবসময় তিনি,’ একথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া ঘোষণা দিয়েছিল আমি প্রধানমন্ত্রী কেন বিরোধীদলীয় নেতাও হতে পারব না, শত বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারব না। এসব ঘোষণার পরই গ্রেনেড হামলা হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান, তার স্ত্রী খালেদা জিয়া ও আরেক সামরিক শাসক এইচএম এরশাদ ক্ষমতায় থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যারা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছিল তাদেরকে পুরস্কৃত করেছিল যা তাদের জড়িত থাকারই স্বাক্ষ্য বহন করে।
শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া, এরশাদ এবং জিয়াউর রহমান কিভাবে এই খুনীদের (বঙ্গবন্ধুর খুনীদের) মদদ দিয়েছে আমার মনে হয় এই কথাটা জাতির জানা উচিত। কারণ এই খুনীরা আমার ভাই দশ বছরের ছোট রাসেলকেও ছাড়েনি বা চার বছরের শিশু সুকান্তকেও ছাড়েনি। যারা পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকান্ড করেছিল তাদেরকেই তারা পুরস্কৃত করেছিল।
পরবর্তীতে আমরা বারবার দেখেছি যে, আঘাত তারা বারবার হেনেছে, উল্লেখ করে তিনি বলেন, এমনকি ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলা, আইভি রহমানসহ আমাদের ২২ জন নেতাকর্মী শাহাদতবরণ করে আর এখানেই থামেনি আমাদের বহু ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ অনেককেই সেই সময় তাদের হাতে নিহত হয়।’
জাতির পিতাকে হত্যার পর তার খুনীদের রক্ষায় তৎকালীন সরকার ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছিল এবং খুনীদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিল বলেও জানান তিনি।
জাতির পিতার খুনীদের কিভাবে পুরস্কৃত করা হয়েছিল সেই কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দেখেছি জিয়ার আমলে তাদেরকে যেমন পুরস্কৃত করা হয়, এরশাদের আমলে তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দেয়া হয় এমনকি রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হবারও সুযোগ করে দেয়া হয়েছিল কর্ণেল ফারুককে।’
খালেদা জিয়া এসে তার থেকে আরো এক ধাপ উপরে উঠে খুনী রশীদকে ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন, যেই নির্বাচন ভোটার বিহীন নির্বাচন, মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্য ছিল না সেই নির্বাচনে ভোট চুরি করে কর্ণেল রশীদকে এবং মেজর হুদাকে পার্লামেন্টে সদস্য করে এনে বসায় এবং কর্ণেল রশীদকে বিরোধী দলের চেয়ারে বসায়।
তিনি বলেন, জাতির পিতার আরেক খুনী মেজর পাশা বিদেশে জিয়াউর রহমানের দেয়া একটা কূটনৈতিক দায়িত্বে ছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে এসে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে জাতির পিতার হত্যার বিচার শুরু করলে পাশাকে চাকুরিচ্যুত করা হয়। পরে সে বিদেশেই থেকে যায় এবং সেখানে মারা যায়। ২০০১ সালে খালেদা জিয়া সরকারে এসে মেজর পাশার চাকুরিচ্যুত অবস্থার পরিবর্তন করে তাকে অবসর দেয় এবং অবসর দিয়ে তার সমস্ত টাকা, পয়সা, বেতনভাতা সব ফিরিয়ে দেয় এবং সেই মৃত ব্যক্তিকে পদোন্নতিও দেয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আরেক আসামি খায়রুজ্জামানের বিচার চলছিল এবং বিচারের রায় প্রদানের তারিখ ঘোষনা হয়েছিল সেই সময় খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে চাকরি দেয়। এমনকি একটা দেশে তাকে রাষ্ট্রদূত হিসেবেও পদোন্নতি দিয়ে পাঠায়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর দেশের অরাজকতার সার্বিক চিত্র তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ৭৫ এর পর বাংলাদেশে ১৯ টা সামরিক ক্যু হয়। আর তার ফলাফল হয় সামরিক বাহিনীর অনেক সদস্য, অফিসার, সৈনিক তাদেরকেও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। কারন একেকটা ক্যু হয়েছে এবং সেই ক্যু’র অপরাধ ধরে নিয়ে কোর্ট মার্শাল করা হয়েছে, ফায়ারিং স্কোয়াডে দেয়া হয়েছে এবং ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
সেই সময়ে যাদের নির্বিচারে’ নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল তাদের স্বজনরা এখন সেইসব হত্যাকান্ডের বিচার দাবি করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসেই এই ঘটনাগুলো ঘটায়। কাজেই তাদের দাবি যে এরও একটা তদন্ত হোক এবং সেই লাশগুলো তারা কেন পেল না।’
এটা বাংলাদেশের জন্য একটা দুর্ভাগ্যজনক বিষয় বলেও উল্লেখ করেন সরকার প্রধান।
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।