প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সূর্য সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য জিটুপি পদ্ধতিতে সরাসরি তাদের ব্যক্তিগত একাউন্টে সম্মানি ভাতা প্রেরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন।
এর ফলে এখন থেকে প্রতিমাসে ১ লাখ ৬৮ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধা ঘরে বসেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ১২ হাজার টাকা করে সম্মানি ভাতা পাবেন।
প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানস্থল ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সঙ্গে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ‘মুজিববর্ষের উপহার’ হিসেবে ‘ম্যানেজমেন্ট ইনফর্মেশন সিস্টেমের সাহায্যে (এমআইএস) ‘জিটুপি’ পদ্ধতিতে ভাতার প্রচলন করেছে। এর ফলে কারো কাছে আর চাইতে হবে না, সরাসরিই তারা মোবাইলে টাকা পেয়ে যাবেন। কারণ, স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধারা অসম্মানিত হন, তা হতে পারে না।
মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের ওপর একটি অডিও ভিজ্যুয়াল পরিবেশনা প্রদর্শিত করা হয়।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধা বাবদ গত ৫ বছরে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। ২ লক্ষ ৫ হাজার ১ শত ৯৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা বা তাঁদের পরিবার বর্তমানে এ সুবিধা পাচ্ছেন।
সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সাধারণ মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৪০ হাজার থেকে বৃদ্ধি করে ১ লক্ষ ৯২ হাজার ৫৩২ জনে উন্নীত করা হয়েছে। তাদেরকে মাসিক সম্মানি ভাতা’র পাশাপাশি ২টি উৎসব ভাতা, জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিজয় দিবস ভাতা ও সকলের জন্য বৈশাখী ভাতাও চালু করা হয়েছে। বর্তমানে ভাতা বহুগুণ বৃদ্ধি করে মাসিক ১২ হাজার টাকা করা হয়েছে এবং আরো বাড়ানো হবে বলে জানা গেছে।
এর আগে ৩ মাস অন্তর জেলা, উপজেলা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধাদের সম্মানী ভাতা প্রদান করা হত। ‘৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার প্রবর্তিত ৩শ’ টাকার দুস্থ মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বর্তমানে সকল মুক্তিযোদ্ধার জন্য সম্মানি ভাতা হিসেবে প্রবর্তিত হয়েছে।
পিএমও এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, যুদ্ধাহত, খেতাবপ্রাপ্ত ও শহিদ পরিবারবর্গের মাসিক সম্মানী ভাতার পরিমাণ পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। ৬ হাজার ১৭৪ জন যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাকে পঙ্গুত্বের ধরণ ভেদে ২৫ হাজার টাকা থেকে ৪৫ হাজার টাকা মাসিক সম্মানি প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া, ৫ হাজার ৮১৬ শহিদ পরিবারকে মাসিক ৩০ হাজার টাকা, মৃত যুদ্ধাহত পরিবারকে মাসিক ২৫ হাজার টাকা, ৭ বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ পরিবারকে মাসিক ৩৫ হাজার টাকা, বীর উত্তম খেতাবধারীগণ মাসিক ২৫ হাজার টাকা, বীর বিক্রম খেতাবধারীগণ মাসিক ২০ হাজার টাকা এবং বীর প্রতীক খেতাবধারীগণ মাসিক ১৫ হাজার টাকা হারে ভাতা পাচ্ছেন।
সম্মানি ভাতার পাশাপাশি শহিদ, যুদ্ধাহত ও ৭ বীরশ্রেষ্ঠ এবং তারামনসহ বিবি বীর প্রতীক হিসেবে মোট ১১ হাজার মুক্তিযোদ্ধা পরিবার রেশন সামগ্রীও পেয়ে থাকেন। সামরিক-অসামরিক নির্বিশেষে সকল যুদ্ধাহত, শহিদ ও খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাগণকে রাষ্ট্রীয় সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে কল্যাণ ট্রাস্ট এর আইন পরিবর্তন করে ২০১৮ সালে নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সর্বমোট ১১ হাজার ৯৯৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা বা তাঁদের পরিবারের রাষ্ট্রীয় সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে।
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।