পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজারে বহুতল ভবন নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। বঙ্গবাজারের নাম পরিবর্তন করে রাখা হচ্ছে ‘বঙ্গবাজার পাইকারি নগর বিপণিবিতান’। ১০ তলাবিশিষ্ট এ ভবনে প্রায় ৩ হাজার ৪২টি দোকান গড়ে তোলা হবে বলে জানা গেছে। বর্তমানে নকশা নির্মাণের কাজ চলছে। নকশা নির্ধারণ হলেই কাজ শুরু হবে। এদিকে পুরোনো ব্যবসায়ীরা সেখানে দোকান বরাদ্দ পাবেন কি না, সেটা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
জানা গেছে, তিনটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে এ ভবন নির্মাণের নকশা প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যে নকশা সবচেয়ে ভালো মনে হবে, সেটির আদলেই ভবনটি নির্মাণ করবে ডিএসসিসি। নতুন ভবনে আধুনিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাসহ লিফট ও ১১টি সিঁড়ি এবং ফায়ার এক্সিট সিঁড়ি থাকবে ছয়টি। সব মিলিয়ে নকশা চূড়ান্ত করার পর ভবন নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করবে ডিএসসিসি। ধারণা করা হচ্ছে, ১০ তলাবিশিষ্ট বহুতল ভবন নির্মাণের ফলে বদলে যাবে বঙ্গবাজারের রূপ, সেই সঙ্গে গতি আসবে ক্ষতিগ্রস্তদের ব্যবসায়।
১.৭৯ একর জায়গার ওপর নির্মাণ হতে যাওয়া বহুতল ভবনে থাকবে ৩ হাজার ৪২টি দোকান। প্রতিটি দোকানের আয়তন হবে ৮০-১০০ স্কয়ার ফুট। এ ভবনে থাকবে বেজমেন্ট ও গ্রাউন্ড ফ্লোর। গ্রাউন্ড ফ্লোরে মোট ৩৮৪টি, প্রথম তলায় ৩৬৬টি, দ্বিতীয় তলায় ৩৯৭টি, তৃতীয় তলায় ৩৮৭টি, চতুর্থ তলায় ৪০৪টি, পঞ্চম তলায় ৩৮৭টি, ষষ্ঠ তলায় ৪০৪টি ও সপ্তম তলায় ৩১৩টি দোকান থাকবে। ভবনটিতে আটটি লিফটের মধ্যে চারটি থাকবে ক্রেতা-বিক্রেতা এবং বাকি চারটি কার্গো লিফট থাকবে মালামাল ওঠা-নামানোর জন্য। এ ছাড়া থাকছে গাড়ি পার্কিং, খাবার দোকান, সমিতির অফিস, নিরাপত্তাকর্মী এবং সেখানকার কর্মীদের আবাসনব্যবস্থা। ভবনটি নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩৮ কোটি টাকা।
গত ৪ এপ্রিল ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মার্কেটগুলো পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়। এ ছাড়া, মহানগর শপিং কমপ্লেক্স, এনেক্সকো টাওয়ার, বঙ্গ হোমিও মার্কেট এবং বঙ্গ ইসলামিয়া মার্কেটের কিছু অংশেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডে ৩ হাজার ৮৪৫ ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হন বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে।
প্রতিবেদনে অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ৩০৩ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয় বলেও উল্লেখ করা হয়। পরবর্তী সময়ে পুড়ে যাওয়া মার্কেটের ফাঁকা স্থানে শামিয়ানা ও ছোট ছোট চৌকি বসিয়ে কোনোমতে ব্যবসা পরিচালনা করছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, সেখানে আগের মতো ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না।
অন্যদিকে, আদৌ দোকান বরাদ্দ এবং ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারবেন কি না, এ নিয়ে শঙ্কিত তারা। বর্তমানে তারা চৌকি ও শামিয়ানা টাঙিয়ে কোনোমতে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। এ অবস্থায় যদি ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়, তাহলে তাদের সেখান থেকে চলে যেতে হবে। একটি ভবন নির্মাণ দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। এত দীর্ঘ সময় তারা কোথায় ব্যবসা করবেন, না কি ব্যবসা গুটিয়ে নেবেন, এসব নিয়ে চিন্তিত তারা।
বঙ্গবাজারে মাহিম কালেকশন নামের একটি দোকানের মালিক খোরশেদ আলম বলেন, ‘ক্ষতি যা হওয়ার তা আগেই হয়েছে। এখন আর আগের মতো ক্রেতা আসে না, বেচাবিক্রিও তেমন নেই। এ অবস্থায় শুনছি, নতুন করে বহুতল ভবন বানাবে সিটি করপোরেশন। বানালে ভালো, আমরা ব্যবসার ভালো পরিবেশ পাব। উন্নত মার্কেটে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রেতারা আসবেন। মার্কেটে আগের মতো ব্যবসা ফিরে আসবে। তবে, মার্কেট নির্মাণের দীর্ঘসময় আমরা কোথায় ব্যবসার করব, কোথায় যাব; আদৌ এ সময় ব্যবসা পরিচালনা করতে পারব কি না, এসব নিয়ে আমরা শঙ্কিত।’
জাহান বস্ত্র বিতানের মালিক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমরা যারা এখানকার আদি ব্যবসায়ী, তারা সবাই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমরা যারা ক্ষতিগ্রস্ত, মার্কেট নির্মাণ হলে তারাই যেন দোকান বরাদ্দ পাই। ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতার আলোকে দেখেছি, কোথাও পুরোনো মার্কেটের স্থানে নতুন মার্কেট নির্মিত হলে সেখানকার ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের অনেকেই নতুন দোকান বরাদ্দ পান না। বরং বাইরে থেকে ব্যবসায়ীরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে গোপন যোগাযোগ করে দোকান বরাদ্দ নেন। আমাদের ক্ষেত্রে যেন এমনটা না হয়, সেটাই দাবি।’
এ বিষয়ে ডিএসসিসির মার্কেট নির্মাণ সেলের প্রকৌশলী তৌহিদ সিরাজ বলেন, ভবন নির্মাণে তিন প্রতিষ্ঠানকে নকশা প্রস্তুত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যেটি সবচেয়ে ভালো বলে মনে হবে, সেই নকশা অনুযায়ী ভবন নির্মাণ হবে। বঙ্গবাজার পাইকারি নগর বিপণিবিতান ভবনটির নির্মাণকাজ বেশ গুরুত্ব সহকারে এগিয়ে চলছে। ডিএসসিসির যতগুলো মার্কেট আছে, তার মধ্যে এ মার্কেট ভবনটি হবে সবচেয়ে আধুনিক।
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।