ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে উপকূলীয় এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিসহ ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যায়।
ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে উপকূলীয় এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিসহ ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যায়।
অনেক এলাকা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। উপকূল অতিক্রমের সময় ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছিল।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল পটুয়াখালীতে। বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে সেখানে ১০২ কিলোমিটার গতিতে বাতাস বয়ে যায়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ ঘূর্ণিঝড়টির চরিত্র বিশ্লেষণ করে গত রাতে বলেন, সব মিলিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি তেমন শক্তিশালী ছিল না। শুধু একটি জায়গায়ই (পটুয়াখালী) বাতাসের গতিবেগ ১০২ কিলোমিটার পাওয়া গেছে। ঘূর্ণিঝড়ে মূলত বৃষ্টি বেশি হয়েছে। আজ শনিবার বৃষ্টি অনেকটাই কমে যাবে।
এরপর আকাশ পরিষ্কার হয়ে যাওয়ায় রাতের তাপমাত্রা কমবে। ফলে শীতের অনুভূতি কিছুটা বাড়বে।
টাঙ্গাইল : বাসাইলে গাছের ডাল পড়ে রাজ্জাক মিয়া (৪০) নামের এক কাপড় ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুরে উপজেলা পরিষদের গেটের সামনে এই দুর্ঘটনা ঘটে। রাজ্জাকের বাড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের মিরিকপুর গ্রামে। বাসাইলে কোটিপতি মার্কেটে কাপড়ের ব্যবসা করতেন তিনি।
চট্টগ্রাম : গাছের ডাল ভেঙে পড়ে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া বৃষ্টিতে চট্টগ্রামের চকবাজার, বাকলিয়াসহ নিম্নাঞ্চলে সড়কে পানি ওঠায় দুর্ভোগে পড়ে মানুষ। চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য ওঠানামা বন্ধ ছিল ছয় ঘণ্টা। এ ছাড়া সারা দিনই চট্টগ্রামে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি ছিল।
চট্টগ্রামের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ছাইফুল্লাহ মজুমদার কালের কণ্ঠকে বলেন, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার মগধরা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে গাছের ডাল পড়ে আব্দুল ওয়াহাব (৭৫) নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রামে আর কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর তাত্ক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।
কক্সবাজার : টেকনাফে বসতঘরের মাটির দেয়াল ধসে একই পরিবারের মাসহ তিন ছেলেমেয়ের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল ভোর ৪টার দিকে উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। নিহত চারজন হলেন পানিরছড়া এলাকার ফকির মোহাম্মদের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (৫০), ছেলে শাহিদুল মোস্তফা (২০), মেয়ে নিলুফা ইয়াছমিন (১৫) ও সাদিয়া (১১)।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আদনান চৌধুরী জানান, মাটি দিয়ে তৈরি ঘরের দেয়াল ধসে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা একই পরিবারের সদস্য। এ ধরনের ঘরে বসবাসরত অন্য পরিবারগুলোর খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে তাদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য ওঠানামা বন্ধ ছিল ছয় ঘণ্টা
বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপত্সংকেত দেখাতে বলা হয়েছিল। এরপর বন্দর নিজেদের নিয়ম অনুযায়ী দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সতর্কতা ‘অ্যালার্ট-৩’ জারি করে। চট্টগ্রাম বন্দরে গতকাল সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত পণ্য ওঠানামা বন্ধ ছিল।
বরগুনা : ভারি বর্ষণ ও থেমে থেমে দমকা বাতাসে বরগুনায় সহস্রাধিক গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। আমন ধানগাছ ও বিস্তীর্ণ এলাকার শীতকালীন সবজিক্ষেত লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে।
জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গাছপালা ভেঙে গেছে এবং অনেক গাছপালা ভেঙে বাড়িঘরের ওপর পড়েছে। অনেক স্থানে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে গেছে।
বাগেরহাট : বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের ৬৬টি খুঁটি, ছয়টি ট্রান্সফরমার, ২৫টি ক্রস আর্ম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ৪১টি স্থানে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে। গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত বাগেরহাটে পল্লী বিদ্যুতের এক লাখ ২০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিল।
খুলনা : বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে গতকাল বিকেল ৪টা পর্যন্ত দমকা বাতাস ও মাঝারি বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, এ সময়ে ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এ ছাড়া জেলার উপকূলীয় দাকোপ, কয়রা, পাইকগাছা ও বটিয়াঘাটা উপজেলার সব আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ আমিরুল আজাদ জানান, মিধিলির প্রভাবে মহানগরীসহ উপকূলীয় এলাকায় মাঝারি আকারের বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হলেও গতকাল সকাল ৬টা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হয়।
গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত জেলার শরণখোলা উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে দুই হাজার নারী-পুরুষ আশ্রয় নেয়। আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপত্সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছিল। মোংলা বন্দরে জাহাজে পণ্য ওঠানামার কাজ বন্ধ রাখা হয়।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলায় ১০টি নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়। দুর্গত এলাকার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার জন্য ৩৭৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়।
বরিশাল : বরিশালে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সঙ্গে রয়েছে ঝোড়ো হাওয়া। বৈরী আবহাওয়ার কারণে দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ রুটে সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
বিভাগে তিন হাজার ৯৭৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়। উদ্ধারকাজে বরিশাল বিভাগের পাঁচ জেলায় ৩২ হাজার ৫০০ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত ছিলেন।
ভোলা : আমন ধানগাছ শুয়ে পড়েছে। প্রায় সব জমিতেই এক থেকে দেড় ফুট পানি জমেছে। এ ছাড়া রবিশস্য পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অসময়ে বৃষ্টি ও বাতাসের কারণে সবজিক্ষেতেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছেন চরাঞ্চলের চাষিরা।
এদিকে তজুমদ্দিন উপজেলার মেঘনা নদীতে চার জেলে নিয়ে একটি মাছধরা জেলে ট্রলার ডুবে গেছে। এ দুর্ঘটনায় তিন জেলে জীবিত উদ্ধার হলেও একজন নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজ জেলের নাম বাদশা মিয়া (৫০)। তাঁর বাড়ি উপজেলার মলংচড়া ইউনিয়নে। গতকাল দুপুরে এই ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটে।
গলাচিপা (পটুয়াখালী) : এক-তৃতীয়াংশ পাকা ধান মাটিতে শুয়ে পড়েছে। পাশাপাশি অতিবৃষ্টির ফলে ধানক্ষেতে পানি জমে গেছে। এতে কৃষকের মারাত্মক ক্ষতি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে উপজেলার রতনীতাতলী ইউনিয়নের গলাচিপা-চরকাজল সড়কে গাছ উপড়ে সকাল ৬টা থেকে দুপুর পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।