গাজীপুর মহানগরের ভোগড়া, কলম্বিয়া ও কোনবাড়িতে সোমবার (৩০ অক্টোবর) পৃথকভাবে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষোভ, মহাসড়ক অবরোধ, গাড়ি ভাঙচুর, পুলিশ বক্স, পিকআপ ও পোশাক কারখানায় অগ্নিসংযোগ করেছে। কলম্বিয়া এলাকায় শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে রাসেল হাওলাদার (২২) নামে এক শ্রমিক আহত হয়। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া এসব ঘটনায় পুলিশ ও শ্রমিকসহ অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে।
নিহত রাসেল হাওলাদার ঝালকাঠি জেলা সদরের বিনাইকাঠি গ্রামের হান্নান হাওলাদারের ছেলে। তিনি কলম্বিয়া এলাকার নূরে আলমের বাড়িতে ভাড়া থেকে স্থানীয় এনার্জিপ্যাক ডিজাইন এক্সপ্রেস কারখানায় ইলেকট্রিশিয়ান পদে চাকরি করতেন। শ্রমিকদের দাবি রাসেল হাওলাদার পুলিশের গুলিতে তাদের সহকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। তবে পুলিশের দাবি ওই শ্রমিক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
বিকেলে গাজীপুর মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশের (দক্ষিণ) উপকমিশনার মোহাম্মদ ইব্রাহিম খান শ্রমিক অসন্তোষ এবং শ্রমিক নিহতের বিষয় নিয়ে তার কার্যালয়ে প্রেসব্রিফিং করেন। বিফ্রিংকালে নিহত শ্রমিকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুপুর ১টার দিকে মহানগরের বোর্ড বাজারের তায়রুননেচ্ছা মেমোরিয়াল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে জিএমপির গাছা থানায় জানানো হয় এক গামেন্ট শ্রমিক অসুস্থ অবস্থায় ওই হাসপাতালে ভর্তি আছে। পুলিশ সেখানে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানায় তার ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ হয়েছে।
পরে তাকে সেখান থেকে টঙ্গীর আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে রাসেল হাওলাদার মারা যায়। ময়নতদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর তার মৃত্যু সঠিক কারণ জানা যাবে।
পুলিশ ও শ্রমিক এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ অক্টোবর থেকে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে গাজীপুরের মহানগরের এবং কালিয়াকৈর উপজেলার বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলন করে আসছে। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কলম্বিয়া গর্মেন্টের সামনে শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে ভাঙচুর এবং একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। পুলিশ তাদের মহাসড়ক থেকে সরাতে গেলে শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ে। এ সময় শ্রমিক-পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে পুলিশ টিয়ার সেল এবং রাবার বুলেট ছুড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিলে দুপুর আড়াইটার দিকে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। এ ঘটনায় পুলিশ ও শ্রমিক অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে।
আহতদের মধ্যে ১৫ জনকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তিকৃতরা হলেন- পোশাক শ্রমিক মাজেদ (৩৮), অনিক (১৮), ফারজানা (২২), আদুরী (২৫) খাদিজা (২৬), মিতু (৩০), তানিয়া (৩০), মফিজ মুন্সি (৩৯), শাকিল (২৫), হেলেনা (৪৫) ও সোহেল (৩০)। আহতদের শরীরের বিভিন্ন অংশে রাবার বুলেটের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করলে তাদের বুঝিয়ে সরানো চেষ্টা করা হয়। কিন্তু শ্রমিকরা অন্দোলন অব্যাহত রেখে বিক্ষোভ, গাড়ি ভাঙচুর ও পিকআপে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে পুলিশ টিয়ারসেল ও ফাঁকা রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে করে।
এদিকে বিকেলে কোনবাড়ির বিসিক শিল্প নগরীর এলাকায় বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে। একপর্যায়ে তারা ট্রাফিক পুলিশ বক্স এবং এবিএম ফ্যাশন কারখানায় আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ও কাশিমপুর মিনি ফায়ারস্টেশন থেকে একটি ইউনিট আগুন নেভায়। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঘটনাস্থলে যাওয়ার সময় শ্রমিকরা ওই গাড়িটি ভাঙচুর করে। এ রিপোর্ট লেখার সময় (রাত সাড়ে ৭টা) বিক্ষিপ্তভাবে শ্রমিকদের আন্দোলন চলছিল বলে জানা গেছে।
প্রেসব্রিফিংয়ে উপকমিশনার মোহাম্মদ ইব্রাহিম খান আরও বলেন, গার্মেন্ট শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির বিষয়টিকে কেন্দ্র বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য উসকানি দিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ ও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কাজ করছে। শীঘ্রই বেতন নিয়ে সমস্যার বিষয়টি সমাধান হবে আশা প্রকাশ করে তিনি শ্রমিকদের আন্দোলন পরিহার করে কাজে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেন।