আজ পহেলা বৈশাখ, বাংলা নতুন বছরের সূচনা দিন। ১৪২৯ সনকে সাদরে স্বাগত জানানোর দিন। বিগত দুটি বৈশাখ কেটেছে মহামারির সঙ্গে লড়তে লড়তে। মহামারির তেজ যখন অনেকটা দুর্বল হয়ে এসেছে, তখন সংকট, সংশয়, ভয় কাটিয়ে নতুন আনন্দে জাগরণের উজ্জীবনী সুর লেগেছে বাঙালির মনে।
এ আনন্দ জীর্ণ, মলিন ও যা কিছু অশুভ তাকে পেছনে ফেলার। নতুন সময়ে মঙ্গলালোকে বাঁচার।
রোজার মাসে পহেলা বৈশাখ পড়ায় এবার উৎসবের মাঝেও সংযমী হয়ে নববর্ষ উদযাপন করবে সবাই। এ উৎসবে পান্তা-ইলিশ তার অবিচ্ছেদ্য অবস্থান থেকে সরে আসবে। হালখাতার চল আগের মতো না থাকলেও এখনো পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা নতুন খাতা খুলে নতুন বছর শুরু করেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশে ও দেশের বাইরে বসবাসরত সব বাংলাদেশিকে বাংলা নবর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন দেশবাসীকে অতীতের সব ব্যর্থতা, জরাজীর্ণতা পেছনে ফেলে নতুন উদ্দীপনা ও উৎসাহে সুন্দর, সমৃদ্ধ আগামী বিনির্মাণে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
১৯৬৭ সালে রমনা বটমূলে সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট প্রথমবারের মতো বর্ষবরণের আয়োজন করে। এরপর এটি হয়ে ওঠে নাগরিক বাঙালির সর্বজনীন উৎসব। ছায়ানটের সভাপতি ও বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অগ্রণী ব্যক্তিত্ব সন্জীদা খাতুন কয়েক দিন আগে বটমূলের আয়োজন নিয়ে বলেছেন, ‘বাংলা বর্ষবরণ এখন দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে বিশ্ব বাঙালির প্রধান প্রাণের উৎসব, বাঙালি ঐতিহ্যের অঙ্গ। আমাদের প্রত্যাশা, বটমূলে অর্ধশতাধিক বছরের এই উৎসবের ধারায় বাঙালির প্রত্যাবর্তন হবে সংযমী, প্রাণবন্ত, আনন্দঘন এবং বিপর্যয় বিনাশের অঙ্গীকারে বলীয়ান। ’ এই প্রত্যাশা মাথায় রেখেই ছায়ানটের বর্ষবরণের এবারের প্রতিপাদ্য ‘নব আনন্দে জাগো’। এ যেন মহামারি ও জরা থেকে গাঝাড়া দিয়ে নতুন আনন্দে জেগে ওঠার উজ্জীবনী মন্ত্র।
ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমেদ লিসা এবারের আয়োজন সম্পর্কে কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, বরাবরের মতো সোয়া ৬টা থেকে অনুষ্ঠান শুরু হবে যন্ত্র ও কণ্ঠে সকালের সুর তুলে। এরপর একক, সম্মেলক, পাঠ, আবৃত্তি ও শেষে ছায়ানটের বক্তব্য বা সভাপতির কথন উপস্থাপন করা হবে। সব শেষে থাকবে জাতীয় সংগীত।
বাংলা বর্ষবরণের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের মঙ্গল শোভাযাত্রা। মহামারির কারণে ২০২০ সালে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়নি। গতবার হয়েছে সীমিত পরিসরে। এবার রজনীকান্ত সেনের গানের কলি ‘নির্মল করো, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে’ প্রতিপাদ্যে শোভাযাত্রা করা হবে। শোভাযাত্রার জন্য ঘোড়া, মাছ, পাখি ও ট্যাপা পুতুল দিয়ে চারটি বড় প্রতীক তৈরি করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর জানিয়েছে, নির্মাণাধীন মেট্রো রেল প্রকল্পের কারণে চলাচলের পথ সরু থাকায় মঙ্গল শোভাযাত্রা টিএসসির সামনের রাজু ভাস্কর্য প্রাঙ্গণ থেকে সকাল ৯টায় বের করা হবে।
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।