সংসারের অভাব ঘোচাতে স্বামীর পাশাপাশি স্ত্রী জীবন্নাহারও চাকরি নেন একটি কম্পোজিট কারখানায়। মাস শেষে পাওয়া বেতন নিয়ে স্বামীর সঙ্গে প্রায়ই ঝগড়া হতো স্ত্রীর। বেশ কিছুদিন ধরেই বেতন নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো। অতিষ্ঠ হয়ে স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা মাথায় আসে স্ত্রী জীবন্নাহারের। পরিকল্পনা অনুযায়ী স্বামীকে হত্যার পর শরীর থেকে মাথা আলাদা করে লাশ করেন ছয় টুকরো। পরে এসব টুকরো বস্তাবন্দি করে ফেলে দেন বাড়ির পাশের একটি বাঁশঝাড়ে।
লাশ উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর স্বামীকে হত্যার এমন লোমহর্ষক বর্ণনা দেন জীবন্নাহার। শনিবার দুপুরে গাজীপুরের পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ ব্রিফিং করে এসব তথ্য তুলে ধরেন গাজীপুর পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার।
পুলিশ সুপার বলেন, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জীবন্নাহার জানায় প্রায় পাঁচ বছর আগে ময়মনসিংহের উলামাকান্দি গ্রামের রফিকুল ইসলামের সঙ্গে নেত্রকোনার বিষমপুর গ্রামের চাঁন মিয়ার মেয়ে জীবন্নাহারের বিয়ে হয়। আড়াই বছর ধরে স্ত্রীকে নিয়ে শ্রীপুর উপজেলার গিলারচালা এলাকায় স্থানীয় আব্দুল হাই মাস্টারের বাড়িতে ভাড়া থাকেন রফিকুল। রফিকুল ‘হাউ আর ইউ’ কারখানায় এবং জীবন্নাহার নিট কম্পোজিট কারখানায় কাজ করতেন। তাদের মারিয়া আক্তার রোজা নামে চার বছরের এক মেয়ে আছে।
এসপি জানান, কয়েক মাস ধরে কারখানার বেতন নিয়ে রফিকুলের সঙ্গে তার স্ত্রীর বিরোধ হয়। এর জেরে গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে ইট দিয়ে স্বামী রফিকুলের মাথায় আঘাত করেন জীবন্নাহার। পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশ ঘরের ওয়্যারড্রোবে লুকিয়ে রাখেন। লাশ যেন কেউ চিনতে না পারেন, সেজন্য কারখানা থেকে বাসায় ফিরে বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে বটি দিয়ে একাই পা, হাত ও মাথা কেটে ছয় টুকরো করেন। এক পর্যায়ে রাত আড়াইটার দিকে মাথা ও হাত ময়লার ড্রামে, শরীর বস্তার ভেতর এবং পা টয়লেটের পাশে ফেলে দেন। শনিবার শ্রীপুর পুলিশ রফিকুলের ছয় টুকরো করা বস্তাবন্দি লাশ ছাড়াও তার মাথা ও শরীরের অন্যান্য অঙ্গ উদ্ধার করে। পরে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে নিহতের স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশের দাবি, হত্যার আলামত ও লাশ গুমের জন্য বটি দিয়ে স্বামীকে ছয় টুকরো করেন জীবন্নাহার।
এসপি শামসুন্নাহার আরো জানান, স্থানীয়দের দেয়া সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার বিকালে ওই শ্রমিকের ছয় টুকরো লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয় জীবন্নাহারকে। হত্যার ঘটনায় আরো কেউ জড়িত রয়েছে কিনা পুলিশ তা তদন্ত করে দেখছে। ঘটনার পর নিহতের বাবা আব্দুল লতিফ বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় মামলা করেছেন।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল শেখ, শ্রীপুর থানার ওসি জাবেদুল ইসলামসহ পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সুত্রঃবাংলাদেশ জার্নাল