ঈদের বাকি এক দিন জমজমাট রাজধানীর পশুর হাট। ক্রেতা আর বিক্রেতা সমানে সমান। ছোট আর মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি হলেও বিক্রি হচ্ছে বড় গরুও। একইভাবে রাজধানী জুড়েই ছড়িয়ে পড়েছে কুরবানিযোগ্য ছাগল। ছাগল কিনতে আর বাজারে যেতে হচ্ছে না। একইভাবে জমে উঠেছে অনলাইনে গরু ব্চোকেনা। ক্রেতার দামি বেশির অভিযোগ করলেও বিক্রেতা বলছে দাম ঠিকই আছে।
গতকাল সোমবার সকাল থেকে রাজধানীর মেরুল বাড্ডার আফতাবনগর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের মাঝে আর একদিন বাকি থাকায় এখন যেসব ক্রেতা আসছেন, তারা অধিকাংশই পশু কিনে ঘরে ফিরছেন। এ কারণে সোমবার সকাল থেকে বিক্রি বেড়েছে। এদিকে দাম কিছুটা চড়া বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।
মোহাম্মদপুরের শাকিল এগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী জাবেদ পাটোয়ারী এ হাটে ৩৪টি গরু এনেছেন বিক্রির জন্য। আরও কিছু গরু প্রস্তুত রয়েছে। বাজার ভালো থাকলে প্রয়োজনে সেগুলোও হাটে তুলবেন। তিনি বলেন, গত দুইদিন একদমই বিক্রি ছিল না। শেষ মুহূর্ত হওয়ায় সোমবার সকাল থেকে বিক্রি বেড়েছে। আজ মঙ্গলবার বিক্রি আরও ভালো হবে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত দুদিনে সাতটি গরু বিক্রি করেছি। গতকাল সকাল থেকে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিক্রি হয়েছে চারটি গরু।
এদিকে গরুর দাম বেশি হওয়ায় শেষ মুহূর্তে দাম কমার অপেক্ষায় অনেক ক্রেতা। হাট থেকে গরু না কিনে ফিরছেন এমন একজন ক্রেতা বলেন, তিনদিনে হাটে এলাম। দাম ধীরে ধীরে কমছে। যত গরু এসেছে, সেই তুলনায় ক্রেতা কম। শেষ দিন কিনব। এ হাটে পশুর দাম কমিয়ে বিক্রির জন্য ব্যাপারীদের সঙ্গে কথাও বলছেন হাট ইজারাদাররা। তারা চাচ্ছেন, বিক্রি যেন আরও বাড়ে।
আফতাবনগর হাটের ইজারাদার মাহবুবুর রহমান শিমুল বলেন, এ বছর গরুর দাম বেশি হওয়ার অভিযোগ করছেন ক্রেতারা। এ জন্য এখন পর্যন্ত বিক্রির পরিমাণ অন্যান্য বছরের তুলনায় কম। তিনি বলেন, আমরা ব্যাপারীদের সঙ্গে কথা বলেছি, যেন তারা করোনাকালীন পরিস্থিতি বিবেচনায় কম মুনাফায় গরু বিক্রি করেন। তাতে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই লাভবান হবেন। শিমুল জানান, আফতাবনগর হাটে এ বছর পশু আমদানি হয়েছে প্রায় ১৭ হাজার। এ পর্যন্ত (সোমবার দুপুর) বিক্রি হয়েছে আনুমানিক ছয় থেকে সাত হাজার। এখনও কিছু পশু আসছে বিভিন্ন এলাকা থেকে।
হাটের ব্যাপারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর রাজধানীর পশুর বাজার চড়া নিয়ে শুরু হয়েছে। কারণ প্রায় সব হাটে পশু আমদানির সংখ্যা গত বছরগুলো থেকে অনেক কম। করোনা পরিস্থিতির কারণে ক্রেতা কম থাকায় গরু বিক্রি হচ্ছে না এখন।
এদিকে সোমবার কিছু ব্যাপারী শঙ্কা জানিয়ে বলেছেন, করোনার কারণে ক্রেতার উপস্থিতি সরবরাহের তুলনায় কম হলে শেষ দিন দাম নেমে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে লোকসানের শঙ্কা রয়েছে তাদের।
আফতাবনগর হাটে যশোর থেকে ১১টি বড় গরু নিয়ে এসেছেন মোজাম্মেল হোসেন। গত শুক্রবার হাট শুরুর আগেও তার সাথে কথা হয়েছিল এই প্রতিবেদকের। সোমবার তিনি জানান, তার গরুগুলো বড়। এর মধ্যে আটটি গরুর দাম দুই লাখের বেশি। এ কারণে বিক্রি হচ্ছে না।
মোজাম্মেল বলেন, মানুষের হাতে টাকা নেই। এ জন্য বিক্রি হচ্ছে না। এ হাটে আট-দশ বছর থেকে আসছি, এমন খারাপ পরিস্থিতি আগে দেখিনি। সবাই এক লাখ টাকার নিচে গরু খুঁজছে। পাশে যশোরের ২২টি গরু নিয়ে আসা মুসলেম মিয়া এর মধ্যে ছয়টি গরু বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, দাম ভালো পেয়েছি ছোট গরুর। বড় গরু বিক্রি হচ্ছে না। এবার বড় গরুর ব্যাপারীরা ধরা খাচ্ছে।
ব্যাপারীরা জানিয়েছেন, এ বছরও বিক্রির জন্য মাঝারি ও ছোট সাইজের গরুর চাহিদা বেশি। বড় গরুগুলো নিয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন বিক্রেতারা।
আফতাবনগর হাট ইজারাদারের পক্ষে নিযুক্ত হাট ব্যবস্থাপনায় দায়িত্বশীল কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, আমরা যা হাসিল করছি, তার অধিকাংশই ছোট ও মাঝারি গরু। সেগুলো দামে কম, এ জন্য আমাদের হাসিল আদায় কমেছে।
রাজধানীর ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার বিভিন্ন রাস্তায় হেঁটে বেড়াচ্ছ ছাগল। কখনও দুটি, আবার কখনও বা চার-পাঁচটি। এ দৃশ্য দেখে যে কারও মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, এ এলাকায় ছাগল ঘুরে বেড়াচ্ছে কেন?
মূল ঘটনা হচ্ছে, এসব ছাগল প্রত্যন্ত খামারিদের। প্রতিবারের মতো এবারও কোরবানির হাটে না নিয়ে ছাগলগুলো তারা ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় নিয়ে এসেছেন। তারা এখানে ঈদের আগে তিন দিন অবস্থান নেন এবং পথে পথে হেঁটে কোরবানির জন্য ছাগল বিক্রি করেন।
সোমবার (১৯ জুলাই) ধানমন্ডির ৮, ১০, ১১ এ, ১২ এ এবং ম্যাজিশিয়ান স্ট্রিট ঘুরে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রত্যন্ত খামারিদের একজন দুই থেকে চারটি, কখনও দুই থেকে তিনজন মিলে ১০ থেকে ১৫টি ছাগল নিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছেন। ছাগলের খাবার হিসেবে তাদের হাতে রয়েছে কাঁঠাল পাতা।
ছাগল দেখে অনেকে গাড়ি থামিয়ে দাম জানতে চাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ ভবনের ওপর থেকে খামারিদের ডাকছেন। পছন্দ আর দাম এক হয়ে গেলে কেউ কেউ কিনেও রাখছেন। খামারিরা জানান, হাটের সমানই লাভ হয় এখানে। কখনও আবার বেশিও হয়। তাই তারা কোরবানির ঈদের আগের তিন দিন থাকেন ধানমন্ডির পথে পথে।
সুনামগঞ্জের টেকেরহাট থেকে নিজ খামারের ছাগল এনে ধানমন্ডি এলাকায় বিক্রি করেন, মো. আরিফ মল্লিক। তিনি বলেন, বাবার সঙ্গে ছোটবেলায় এখানে এসেছি। প্রায় ২০ বছর ধরে আমি একাই ছাগল নিয়ে এখানে আসি। এখানে প্রতি বছরই ভালো বিক্রি হয়। তবে এ বছর আর গত বছর তেমন হয়নি। এবার ৯০টি ছাগল নিয়ে এসেছি। এখন পর্যন্ত ২০টি ছাগল বিক্রি হয়েছে। এখানেও বাজারের মতোই দাম থাকে। আমার কাছে থাকা ছাগলগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন দাম ১০ হাজার টাকা ও সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা।
মাদারীপুর থেকে মাহফুজ রহমান জনি নিয়ে এসেছেন ৩০টি ছাগল। তিনি বলেন, আমরা এ এলাকায় হেঁটে হেঁটেই ছাগল বিক্রি করি। লোকজনের হাটে যেতে হয় না। এ সুবিধার কারণে এখান থেকেই ছাগল কেনেন অনেকে। লোকসান হয় না।
এ বছর ১০টি ছাগল নিয়ে গোপালগঞ্জ থেকে ধানমন্ডিতে এসেছেন রিপন। তিনি প্রতি বছর সবকটি ছাগলই বিক্রি করে যেতে পারেন। গত দুদিনে তিনি পাঁচটি ছাগল বিক্রি করতে পেরেছেন। আশা করছেন, কালকের মধ্যে সব বিক্রি করে রাতেই বাড়ি ফিরতে পারবেন।
খামারিরা জানান, তারা তিন দিনের জন্য বিভিন্ন ভবনের গ্যারেজ ভাড়া করে ছাগল রাখেন। আর তারা থাকেন ভবনে। ছাগলের খাওয়ার জন্য পাতা সংগ্রহ করেন ধানমন্ডি লেক থেকে। তিন দিন ধানমন্ডি চষে বেড়ান তারা। সব ছাগল বিক্রি করে বা অবশিষ্ট ছাগল নিয়ে ঈদের আগের রাতেই পাড়ি জমান আপন ঠিকানায়। ধানমন্ডির মত একই অবস্থা দেখা গেছে,মগবাজার যাত্রাবাড়ি,মিরপুর এবং উত্তরা এলাকায়। বলতে গেলে সারা ঢাকা শহর জুড়েই যেওেনা ছাগলের হাট। তবে এসব ছাগলেও দাম কিন্তু কম না। কিছুটা সুবিধা হলে হাসলি দিতে হচ্ছে না।
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।