নামাজ মুমিনের অন্যতম প্রধান ইবাদত। আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার উপর আরোপিত সকল ইবাদতের মধ্যে নামাজ এমন একটি ইবাদত যা ব্যক্তিজীবনকে গড়ে তুলে মুমিন হিসেবে আর সমাজ জীবনে ব্যক্তি কে গড়ে তুলে সুবাসিত পুষ্প তুললে। নামাজের মাধ্যমেই জীবনের সর্বাঙ্গীন সফলতা লাভ করা যায়।ইসলামী শরীয়ত প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক সুস্থ ব্যক্তির উপর দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছে।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সালাত আদায়ের বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। তাই তিনি সালাতের বিষয়ে অনেক কথা বলে গিয়েছেন। রাসূলে করিম (সা.) সালাতের ফজিলত ও মরতবা সম্পর্কে অসংখ্য বর্ণনার মধ্যে নিচে কয়েকটি হাদীস বর্ণনা করা হলো।
(১) যে ব্যক্তি পাক-পবিত্র সহি শুদ্ধভাবে রুকু-সেজদার সাথে নামাজ আদায় করলো তার জন্যে বেহেশত ওয়াজিব, দোজখ তার জন্য হারাম হয়ে যায়।
(২) আল্লাহর পেয়ারা হাবীব (স) আরো এরশাদ করেছেন, রোজ হাশরে সর্বাগ্রে নামাজের হিসাব নেয়া হবে, মহান রাব্বুল-আলামীন আমার উম্মতের উপর সর্বপ্রথম নামাজ ফরজ করেছেন। নামাজ দ্বীন-ইসলামের খুঁটিস্বরূপ।
(৩) আল্লাহ পাক পরওয়ারদেগার ঐ ব্যক্তিকে দেখ্তে অধিক ভালোবাসেন যে নামাজের মধ্যে সেজদায় কপাল মাটিতে ঠেকায়।
(৪) নামাজ অন্তরের নূরস্বরূপ-যার ইচ্ছা হয় নামাজ দ্বারা অন্তরকে আলোকিত করতে পারে।
(৫) মানুষ নামাজে দাঁড়ালে তাঁর জন্য বেহেশ্তের দরওয়াজা খুলে যায়।
(৬) আল্লাহ ও নামাজের মধ্যে কোন আড়াল থাকে না।- সেজদা অবস্থায় আল্লাহ পরম করুনাময়ের সান্নিধ্য-নৈকট্য বেশী অর্জিত হয়।
(৭) নামাজের জন্য আল্লাহতায়ালাকে ভয় করো তিনবার বলা হয়েছে। দ্বীন-ধর্মের একমাত্র নিদর্শন
নামাজ- যে ব্যক্তি একাগ্রচিত্তে নামাজ সম্পন্ন করে সে প্রকৃত মো’মেন। (৮) দেহের জন্যে যেরূপ মক্তব, দ্বীনের জন্য তেমন নামাজ।
(৯) সেজদায় ব্যবহৃত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আল্লাহ পাক দোজখের আগুনের জন্য হারাম করে দিয়েছেন।
(১০) ওয়াক্তমত শুদ্ধভাবে যে নামাজ আদায় করে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট সর্বাপেক্ষা প্রিয়।
(১১) নামাজ মো’মেন লোকের রূহস্বরূপ।
(১২) মহান আল্লাহ পাক ঈমান ও নামাজের চাইতে শ্রেষ্ঠতর আর কিছু ফরজ করেন নাই। যদি করতেন তবে তার ফেরেশতাকুলকে করতে হুকুম করতেন।
(১৩) মানুষ ও শেরেকের মধ্যে নামাজই একমাত্র প্রাচীর।
(১৪) জমীনের যে অংশে নামাজ আদায় করা হয় সেই অংশ অন্য। অন্য অংশের উপর গর্ব করে থাকে।
(১৫) প্রাত:কালে যে নামাজ পড়তে যায় তার ঈমানের ঝান্ডা উড্ডিদ থাকে।
(১৬) আউয়ালওয়াক্ত অর্থাৎ নামাজের সময় হলে প্রথম দিকে নামাজ আদায় আল্লাহ পাকের নিকট অতীব পছন্দনীয়।
(১৭) নামাজ নি:সন্দেহে প্রত্যেক মো’মেন বান্দার কোরবানীস্বরূপ।
(১৮) ওয়াক্তমত (সুনির্দিষ্ট সময়ে) নামাজ আদায় করা সর্ব শ্রেষ্ঠ আমল।
(১৯) মানুষ যখন একান্তচিত্তে নামাজ আদায় করতে থাকে শয়তান তখন তার প্রতিভয় জড়-সড় কম্পমান থাকে।
(২০) সে যখন নামাজের ব্যতিক্রম করে তখন শয়তানের সাহস বৃদ্ধি পায় ও পথভ্রষ্ট করার চেষ্টা করে।
(২১) দু’রাকাত নামাজ পড়ে দোওয়া করলে নিশ্চিত আলøাহপাক তা কবুল করে নেন।
(২২) যে ব্যক্তি নির্জনে এমনভাবে নামাজ আদায় করলো যে, আলøাহপাক ব্যতীত কেহ জানেনা সে যেন আলহর প্রিয় বান্দা হিসাবে পরিগণিত হলো এবং দোওয়া-ফরিয়াদ কবুলিয়াতের দরজায় পৌঁছে গেল।
(২৩) জোহরের ফরজের পূর্বের চারি রাকাত নামাজ তাহাজ্জুদের চারি রাকাতের সমান। (২৪) মাঝ রাতের নামাজ শ্রেষ্ঠতম ইবাদত।
(২৫) মানুষ যখন নামাজের জন্য দাঁড়ায় আল্লাহ তাবারক তায়ালার রহমত, করুনা, বরকত, নেয়ামত বর্ষিত হয়।
(২৬) হজরত জিব্রাইল (আ) বলেছেন, হে মোহাম্মদ (স) মোমেন বান্দার শরাফত, বোজগী একমাত্র তাহাজ্জুদ নামজে ইহাতে সন্দেহ নেই।
(২৭) রাত্রের দু’রাকাত নামাজ দুনিয়ার সকল কিছু হতে শ্রেষ্ঠ।
(২৮) তাহাজ্জুদ নামাজ অবশ্যই পড়বে কারণ তাহাজ্জুদ নামাজে রাব্বুল আলামীনের সান্নিধ্যলাভ এবং যাবতীয় পাপ পংকিলতা থেকে ক্ষমা পাওয়া যায়।
(২৯) আল্লাহ পাক তাঁর বান্দাদের এরশাদ করেছেন, তোমরা দিবসের প্রথম ভাগের চারি রাকাত নামাজ আদায়ে কোন প্রকার কার্পণ্য করিও না। কেননা এই নামাজের বদৌলতে সারা দিনের তোমার যাবতীয় কাজ কর্ম, ইচ্ছা, বাসনা সম্পাদন করে দিব।
(৩০) নামাজ শ্রেষ্ঠ জেহাদ।
(৩১) যখন কোন আসমানী আপদ-বালা-মুসিবত আপতিত:হয় -তখন যারা নামাজ আদায়কারী তাদের উপর থেকে যাবতীয় আপদ-সমস্যা, সংকট থেকে মুক্তিলাভ করবে। (৩২) অজু করত: নম্র ও বিনয়ের সাথে যে নামাজ আদায় করত: মাগফিরাত কামনা করে, তার সর্ব প্রকার গুণাহ রাশীক্ষমা করে দেয়া হয়।
(৩৩) হজরত রাসুলে পাক (স) বলেছেন, যাবতীয় আমলের মধ্যে নামাজই আমার নিকট অত্যন্ত প্রিয়।
(৩৪) নামাজ সম্পর্কে আরো বলা হয়েছে- নামাজ রোজা রোজগার বৃদ্ধি করে এমনকি, রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তিলাভ এবং মন-দিলকে শক্তিশালী, বিশেষ করে চেহারা নুরানী হয়ে ওঠে।
(৩৫) নামাজ থেকে যারা গাফেল (দূরে সরে) থাকে এসব মানুষদের কুকুরের সমতুল্য করে দেয়।
(৩৬) এছাড়া আরো বলা হয়েছে-বিনাওজরে ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ত্যাগ করলে সে কাফেরের পর্যায়ভুক্ত হবে।
১। হযরত হানযালা আল উসাইদী রাযি. হতে বর্ণিত,
২। হযরত আবু হুরায়রা রাযি. হতে বর্ণিত
৩। হযরত আবু হুরায়রা রাযি. হতে বর্ণিত,
৪/ عن أبي ذر أن النبي صلى الله عليه وسلم خرج زمن الشتاء والورق يتهافت فأخذ بغصنين من شجرة قال فجعل ذلك الورق يتهافت قال فقال يا أبا ذر قلت لبيك يا رسول الله قال إن العبد المسلم ليصل الصلاة يريد بها وجه الله فتهافت عنه ذنوبه كما يتهافت هذا الورق عن هذه الشجرة
১। হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
২। হযরত নাওফাল ইবনে মুয়াবিয়া রাযি. হতে বর্ণিত,
৪। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাযি. হতে বর্ণিত,
আল্লাহ তা’আলা আমদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ইহতেমাম করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।