২৭ জানুয়ারি চালু হচ্ছে করোনাভাইরাসের টিকা নিতে নিবন্ধনের সফটওয়্যার- সুরক্ষা। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে ৫৫ বছরের বেশি বয়সি সাড়ে চার কোটি নাগরিক ও ফ্রন্টলাইনারদের তথ্য এর মাধ্যমে সংগ্রহ করা হবে। সোমবার বিকালে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
করোনাভাইরাসের টিকা নিতে নিবন্ধনের জন্য একটি ওয়েবসাইট সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করেছে বাংলাদেশ।
ওয়েবসাইটটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সেখানে পুরো প্রযুক্তিটি কিভাবে ব্যবহার করা হবে, তা তুলে ধরেছেন কর্মকর্তারা।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, আইসিটি বিভাগ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এই অ্যাপলিকেশনটি তৈরি করেছে।
যারা কভিড-১৯ এর টিকা নিতে চাইবেন, তাদের এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নাম নিবন্ধন করতে হবে। মোবাইলে ব্যবহারের জন্য একটি অ্যাপ তৈরির কাজ চলছে বলেও কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
যে ওয়েবসাইটে নাম নিবন্ধন করতে হবে
http://www.surokkha.gov.bd/ নামের ওয়েবসাইটে টিকা নিতে আগ্রহীদের নাম নিবন্ধন করতে হবে।
সেখানে প্রথমে নিজের পেশার ধরণ, পেশা বাছাই করার পরে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও জন্ম তারিখ দিতে হবে। বাংলাদেশের আইসিটি বিভাগের প্রোগ্রামাররা এই ডাটাবেজটি তৈরি করেছেন।
বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, এটি একটি ওয়েব অ্যাপলিকেশন। দেশের ন্যাশনাল ডাটা সেন্টারে এটি হোস্ট করা হয়েছে। ফলে যত মানুষ এটায় নিবন্ধন করতে চাইবেন, সেই অনুযায়ী এর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা যাবে।
তিনি জানিয়েছেন, এর মোবাইল ভার্সনটি প্রস্তুত করে রাখা হবে। যখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চাইবে, তখনি তাদের দেয়া হবে।
বাংলা ও ইংরেজি, উভয় ভাষায় এই ওয়েবসাইটে তথ্য পূরণ করা যাবে। ওয়েব অ্যাপলিকেশনে নিবন্ধন করতে হলে তাদের বয়স ন্যূনতম ১৮ বছর হতে হবে।
নিবন্ধন করার সময় তার নাম, বয়স, পেশা, এনআইডি নম্বর, ঠিকানা (সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভার ওয়ার্ড), যে কেন্দ্রে টিকা নিতে আগ্রহী – সেই কেন্দ্র নির্ধারণ করে দিতে হবে।
দেশের জাতীয় তথ্যভাণ্ডারের সঙ্গে এই ওয়েবসাইট যুক্ত থাকবে। ফলে যখন কেউ তার এনআইডির নম্বর প্রবেশ করবেন, সঙ্গে সঙ্গে তার নাম, পরিচয়, বয়স ইত্যাদি ডাটাবেজে চলে আসবে।
তবে এজন্য কোন স্ক্যান করা কপি বা ছবি দিতে হবে না। নিবন্ধনের জন্য কোন খরচ বা ফি নেই।
একটি এনআইডি নম্বর থেকে একবারই নিবন্ধন করা যাবে। যেকোনো ব্যক্তি তার কম্পিউটার ব্যবহার করে এই নিবন্ধন করতে পারবেন।
নিবন্ধন সম্পন্ন হওয়ার পর একটি ভ্যাকসিন কার্ড আসবে। সেটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিতে হবে। টিকা নেয়ার সময় এই কার্ডটি দরকার হবে।
মোবাইল নম্বরে যাবে এসএমএস
নাম নিবন্ধন করার সময় একটি মোবাইল নম্বর দিতে হবে। নম্বরটি যাচাই করার জন্য একটি ওভার দ্য ফোন বা ওটিপি নম্বর আসবে। সেটা ওয়েবসাইটে দেয়ার পর নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
পরবর্তীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এই মোবাইল নম্বরেই এসএমএস পাঠিয়ে টিকা দেয়ার সময় ও স্থান জানিয়ে দেয়া হবে। সেই নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হয়ে টিকা নিতে হবে। সে সময় নিবন্ধনের কার্ডটি দরকার হবে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, একটি ফোন নম্বর ব্যবহার করে পরিবারের সর্বোচ্চ পাঁচ জন সদস্যের জন্য নিবন্ধন করা যাবে।
কিভাবে অগ্রাধিকার তালিকা নির্ধারণ করা হবে?
নিবন্ধন করার সময় পেশা নির্বাচনের একটি ঘর আসবে। সেখানে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পেশা নির্বাচন করতে হবে।
তবে অ্যাপলিকেশন নির্মাণের সঙ্গে সংযুক্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চিকিৎসক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইত্যাদি সম্মুখ সারিতে কর্মরত ব্যক্তিদের তালিকা আলাদাভাবে সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেই তালিকায় তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরও থাকছে।
সেটাও ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
ফলে যখন কেউ নাম নিবন্ধন করবেন, সেই তালিকার সঙ্গে মিলে গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবে টিকা নেয়ার অগ্রাধিকার তালিকায় চলে আসবেন।
পাশাপাশি ওই ব্যক্তির ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, শ্বাসতন্ত্রের রোগ বা হৃদরোগের মতো অন্য কোন শারীরিক জটিলতা আছে কিনা, সেটা জানানোর একটি অপশন আসবে, যেখানে হ্যা অথবা না চিহ্নিত করে দিতে হবে।
কবে থেকে টিকা দেয়া শুরু হবে
২৭ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে তিনটায় করোনার টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিন মোট ২০ জনকে টিকা দেওয়া হবে। তবে প্রধানমন্ত্রী প্রথম পাঁচজনের টিকা দেওয়ার সময় ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত থাকবেন।
সোমবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক সভা শেষে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, উদ্বোধনী টিকাদান অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত হবে। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন। বক্তব্য দেবেন শুধু স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, মোট ২০ জনকে ওই দিন টিকা দেওয়া হবে। তবে প্রথম ৫ জনকে টিকা দেওয়া পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে যুক্ত থাকবেন। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল থেকে এ অনুষ্ঠান বিটিভি সরাসরি প্রচার করবে।
টিকা নেয়ার সার্টিফিকেট
প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলছেন, এই সুরক্ষা অ্যাপলিকেশনের মাধ্যমে প্রত্যেকে টিকা সম্পর্কিত সকল তথ্য জানতে পারবেন।
সেই সঙ্গে টিকার দু’টি ডোজ নেয়ার পর তিনি টিকা নেয়ার একটি সনদ এই ওয়েবসাইট থেকেই ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিতে পারবেন।
কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করে বলেছেন, অনলাইনে এভাবে নিবন্ধন করার মাধ্যমে বাংলাদেশে কতোজন মানুষ টিকা পেয়েছেন, কোন শ্রেণী-পেশার মানুষ পাচ্ছেন, সকল তথ্য পাওয়া যাবে।
প্রথমে যারা টিকা পাবেন
টিকা নেয়ার ক্ষেত্রে প্রথম পর্যায়ে ১৭ ক্যাটেগরির নাগরিকদের নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রথমে তাদের টিকা নেয়ার পরে অন্যরা টিকা নেয়ার সুযোগ পাবেন।
এই ১৭ ক্যাটেগরির মধ্যে রয়েছে:
সরকারি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মী, বেসরকারি ও প্রাইভেট স্বাস্থ্যকর্মী, প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত সকল সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা কর্মী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনা, সম্মুখসারির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য, রাষ্ট্র পরিচালনায় অপরিহার্য কর্মকর্তা, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারী, সকল ধর্মের ধর্মীয় প্রতিনিধি, মৃতদেহ দাফন বা সৎকারকাজে নিয়োজিত ব্যক্তি, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও ফায়ার সার্ভিসের মতো জরুরি সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি, নৌ-রেল-বিমানবন্দরে কর্মরত ব্যক্তি, ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী, জেলা-উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সরকারি কার্যালয়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং প্রবাসী অদক্ষ শ্রমিক।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর করোনাভাইরাসের টিকার প্রাপ্যতা অনুযায়ী মাসভিত্তিক বিতরণ তালিকা তৈরি করেছে। সেখানে প্রথম ফেইজের প্রথম স্টেইজে মোট জনসংখ্যার ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ, অর্থাৎ ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
ভারত সরকারের উপহার হিসেবে ২০ লাখ ডোজ টিকা বাড়তি পাওয়ায় প্রথম মাসে ৭০ লাখ টিকা হাতে আসার কথা। সেখান থেকে ৬০ লাখ ডোজ টিকা দেওয়া হবে। পরের মাসে দেওয়া হবে ৫০ লাখ ডোজ।
প্রথম মাসে সবার আগে টিকা পাবেন ৪ লাখ ৫২ হাজার ২৭ জন সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী। এছাড়া কভিড-১৯ স্বাস্থ্য সেবায় সরাসরি নিয়োজিত অনুমোদিত সব বেসরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের ছয় লাখ স্বাস্থ্যকর্মী প্রথম ধাপেই টিকা পাবেন।
টিকা অগ্রাধিকার তালিকায় আছেন ২ লাখ ১০ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধা, সামরিক ও বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর ১ লাখ ৮০ হাজার ৪৫৭ জন, রাষ্ট্র পরিচালনায় অপরিহার্য কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ২৫ হাজার জন, সম্মুখসারির ২৫ হাজার জন গণমাধ্যমকর্মী, ৮৯ হাজার ১৪৯ জন জনপ্রতিনিধি, সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভার ৭৫ হাজার জন কর্মচারী, মৃতদেহ সৎকারে নিয়োজিত কর্মীদের মধ্যে ৩৭ হাজার ৫০০ জন।
এছাড়া পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পয়োনিষ্কাশন, ফায়ার সার্ভিস এবং বিমানবন্দরের ২ লাখ কর্মী, স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরের ৭৫ হাজার জন, ৬০ হাজার প্রবাসী অদক্ষ শ্রমিক, জেলা-উপজেলায় জরুরি জনসেবায় নিয়োজিত ২ লাখ সরকারি কর্মচারি এবং ফুটবল,
হকি, ক্রিকেট মিলিয়ে জাতীয় দলের ১০ হাজার ৯৩২ জন খেলোয়াড় প্রথম মাসেই টিকা পাবেন।
বাফার, ইমার্জেন্সি, আউটব্রেক মোকাবেলায় প্রথম মাসে ৭০ হাজার ডোজ টিকা সংরক্ষণে রাখার কথা বলা হয়েছে পরিকল্পনায়।
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।